স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যাবলি

মাথার খুলির মধ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অংশের নাম মস্তিষ্ক। আর মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গুরুমস্তিষ্ক। গুরুমস্তিষ্কের অবস্থান মস্তিষ্কের উর্ধ্বাংশে। এর গঠনবিন্যাস এবং কার্যাবলি অত্যন্ত জটিল। মানুষের উন্নততর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুমস্তিষ্কের ভূমিকা অপরিসীম।

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের গঠন ও কার্যাবলি 

যে স্নায়ুতন্ত্র ইচ্ছার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করে তা স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র প্রধানত দুইটি অংশে বিভক্ত। যথা: ক. সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র, খ. পরাসমবেদী বা উপসমবেদী স্নায়ুতন্ত্র। 

নিচে এদের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো:

ক. সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র গঠন: 

এটি বক্ষদেশ ও কটিদেশের স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু নিয়ে গঠিত। এজন্যে সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রকে বক্ষ-কটিদেশীয় স্নায়ুতন্ত্র বলা হয়। মানবদেহে ২২টি সমবেদী গ্যাংলিয়া রয়েছে। এ গ্যাংলিয়া শৃঙ্গলের আকারে মেরুরজ্জুর পাশে থাকে। এগুলো মেরুরজ্জু থেকে বের হয়ে হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, গ্রন্থি, পেশি ইত্যাদিতে যুক্ত হয়েছে।

সমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের কাজ 

সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন সময়ে মানবদেহে নানা গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি কাজ সম্পাদন করে। এর কাজগুলো নিম্নরূপ:

১. সমবেদী স্নায়ুতন্ত্র হৃৎপিন্ডের কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়, ফলে রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়।

২. পরিপাক কাজে বিঘ্ন ঘটায়।

৩. শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত করে।

৪. রক্তের চাপ ত্বরান্বিত করে।

৫. চোখের তারাকে বড় করে।

৬. শরীর থেকে ঘামের সাথে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়।

৭. শরীরের লোম বা পশম খাড়া করে। 

৮. এড্রিনালিন নিঃসরণে সহায়তা করে। রক্তে সুগারের পরিমাণ বাড়ায়।

৯. দেহতাপ বৃদ্ধি করে এবং দেহে মৃদু ঝাঁকুনির সৃষ্টি করে।

১০. শারীরিক শক্তি ক্ষয় করে।

খ. উপসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের গঠন: 

উপ বা পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্র করোটীয় এবং বস্তিদেশীয় স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু নিয়ে গঠিত। এজন্যে একে করোটিয়-বস্তিদেশীয় স্নায়ুতন্ত্র বলা হয়। এর গ্যাংলিয়াগুলো শৃঙ্গলযুক্ত নয়। করোটিয় অঞ্চলের স্নায়ুগুলো চক্ষু, লালাগ্রন্থি, পাকস্থলি, অন্ত্র, হৃৎপিন্ড ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত। আর বস্তিদেশীয় স্নায়ুগুলো মূত্রনালি, পায়ু এবং যৌনঅঙ্গের সাথে সংযুক্ত।

উপসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের কাজ 

উপ বা পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্রের কাজ হলো শরীরের শক্তিকে সংরক্ষণ করা ও সঞ্চিত করা। উপ বা পরাসমবেদী স্নায়ুতন্ত্র যেসব কাজ করে তা নিম্নরূপ:

১. হৃৎপিন্ডের ক্রিয়ার গতি কমিয়ে দেয়, রক্ত সঞ্চালন হ্রাস করে।

২. দেহের রক্তচাপ কমায়।

৩. হজম বা বিপাক ক্রিয়ার সাহায্য করে।

৪. দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়।

৫. মলমূত্র ত্যাগে সাহায্য করে।

৬. চোখের মণিকে ছোট করে।

৭. যৌনগ্রন্থির কাজকে উদ্দীপিত করে।

৮. ঘর্মগ্রন্থিকে অপেক্ষাকৃত নিষ্ক্রিয় করে।

উপসংহার 

স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র মানুষ ও প্রাণীর আচরণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো কারণে এ তন্ত্রের ক্ষতি সাধন হলে প্রাণীর আচরণ ও অন্যান্য যন্ত্রমণ্ডলীতে মারাত্মক সমস্যা দেখা দিতে পারে। অতএব, প্রাণীর স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপনে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url