মানব কর্ণের গঠন ও কার্যাবলি
মানবজীবনে কর্ণের গুরুত্ব অপরিসীম। মাথায় প্রায় ৭ বা ৮ ইঞ্চি ব্যবধানে প্রত্যেক মানুষের দুটি কর্ণ রয়েছে। এ দুটি কর্ণ পরিবেশের সকল শব্দ তরঙ্গ গ্রহণ করে থাকে। ফলে আমরা পরিবেশের বিভিন্ন শব্দ বিষয়ক ঘটনাবলি সম্বন্ধে সহজেই অবগত হতে পারি। নিম্নে চিত্রসহ মানক কর্ণের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করা হলো-
মানব কর্ণের গঠন ও কার্যাবলি
মানব কর্ণের গঠন ও কার্যাবলি নিচে দেয়া হলো:
১. বহিঃকর্ণ:
বহিঃকর্ণ শব্দ তরঙ্গ সংগ্রহ করে। এটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত । যথা-
ক. কানের পাতা/পিনা: পিনা কানের বাহিরের অংশ। ত্বক দ্বারা আচ্ছাদিত মাংসল এবং কার্টিলেজ নির্মিত।
কাজ: কর্ণকুহরে শব্দতরঙ্গ প্রেরণ করে।
খ. কর্ণকুহর: পিনা একটি নালির সাথে যুক্ত থাকে। এ নালিকে কর্ণকুহর বলে। কর্ণকুহর ভেতরের দিকে কিছুটা তির্যকভাবে অবস্থান করে। ফলে কোন কঠিন বস্তু সরাসরি কর্ণপটহে আঘাত করতে পারে না।
কাজ: কর্ণকুহরের প্রাচীরে লোম এবং মোমজাতীয় পদার্থ নিঃসরণকারী গ্রন্থি থাকার কারণে বাহিরের ধূলিকণার ক্ষতি থেকে কর্ণপটহ রক্ষা পায়। এ নালি পথে শব্দ তরঙ্গ প্রবেশ করে কর্ণপটহে কম্পন সৃষ্টি করে।
গ. কর্ণপটহ: কর্ণ কুহরের শেষ প্রান্ত যোজক টিস্যু নির্মিত একটি পর্দায় সমাপ্ত হয়। এ পর্দাকে কর্ণপটহ বা কানের পর্দা বলা হয়।
কাজ: শব্দ তরঙ্গ কর্ণপটহকে স্পন্দিত করে।
২. মধ্যকর্ণ:
এটি একটি বায়ু পূর্ণ প্রকোষ্ঠ এবং নিম্নলিখিত অংশ নিয়ে গঠিত:
ক. অস্থি: মধ্যকর্ণ কর্ণপটহ দ্বারা বহিঃকর্ণ থেকে পৃথক থাকে। মধ্য কর্ণে তিনটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্থি, একটির সাথে অন্যটি সংযুক্ত হয়ে একটি চেইনের মতো অবস্থান করে। অস্থিগুলো হলো হাতুড়ি সদৃশ মেলিয়াস, নেহাই সদৃশ ইনকাস এবং ঘোড়ার জিনের পা দানীর ন্যায় স্টেপ্স। মেলিয়াসের একপ্রান্ত কর্ণপটহের গাত্রে এবং স্টেপ্সের একপ্রান্ত অন্তঃকর্ণের ফেনেস্ট্রা ওভালিসের পর্দাগাত্রে বসানো থাকে। ইনকাস, মেলিয়াস ও স্টেপ্সকে যুক্তকরণের মাধ্যমে চেইন গঠন করে।
কাজ: কর্ণপটহে সৃষ্ট শব্দতরঙ্গ অস্থিগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয়ে অন্তঃকর্ণে পৌঁছে।
খ. ইউস্টেশিয়ান নালি: মধ্যকর্ণ যে নালির মাধ্যমে গলবিলের সাথে যুক্ত থাকে তাকে ইউস্টেশিয়ান নালি বলে। মধ্যকর্ণ এবং ইউস্টেশিয়ান নালির প্রাচীর মিউকাস পর্দার আবরণ দ্বারা আবৃত থাকার কারণে গলবিল থেকে জীবাণু মধ্যকর্ণে প্রবেশ করতে পারে এবং রোগ সৃষ্টি করতে পারে। কান পাকা নামে পরিচিত রোগটি এভাবেই হয়ে থাকে।
কাজ: ইউস্টেশিয়ান নালি দ্বারা বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের বায়ুচাপের সমতা রক্ষা হয়। ফলে কর্ণপটহ ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।
ছিদ্রপথ: মধ্য কর্ণ ও অন্তঃকর্ণের মধ্যে অবস্থিত প্রাচীরের গাত্রে দুটি ছিদ্র আছে। প্রত্যেকটি ছিদ্রে পর্দা থাকে। উপরের ডিম্বাকৃতি ছিদ্রকে ফেনেস্ট্রা ওভালিস এবং নিচের গোলাকার ছিদ্রকে ফেনেস্ট্রা রোটান্ডা বলে।
কাজ: ফেনেস্ট্রা ওভালিস পেরিলিক্ষে কম্পন সৃষ্টির মাধ্যমে ককলিয়ায় প্রেরণ করে। ফেনেস্ট্রা রোটাণ্ডা কম্পনরোধক হিসেবে কাজ করে এবং ককলিয়ায় তরল পদার্থের চলাচল হ্রাস করে।
৩. অন্তঃকর্ণ:
অন্তঃকর্ণের গঠনপ্রণালি জটিল। অন্তঃকর্ণের মধ্যে অর্ধবৃত্তাকার নালি, ভেস্টিবুলার যন্ত্র, ককলিয়া, এবং শ্রবণগত স্নায়ু সংযুক্ত।
- অর্ধবৃত্তাকার নালি (Semi ciruclar canal): অন্তঃকর্ণে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার নালি আছে।
- ভেস্টিবুলার যন্ত্র (Vestibular organ): ভেস্টিবুলার যন্ত্র একটি ভারসাম্য রক্ষাকারী ইন্দ্রিয়। ভেস্টিবুলারের এক পার্শ্বে অর্ধবৃত্তাকার নালি এবং অপর পার্শ্বে ককলিয়া রয়েছে।
- ককলিয়া (Cochlea): ককলিয়া অন্তঃকর্ণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ককলিয়া দেখতে শামুকের মতো। ককলিয়াতে জলীয় পদার্থে পূর্ণ তিনটি প্যাঁচানো নালি থাকে, এর একটি অন্যটি থেকে ঝিল্লি দ্বারা পৃথক। শব্দতরঙ্গের চাপে অস্থিশৃঙ্খলগুলো আন্দোলিত হলে, এ উত্তেজনা ককলিয়ার জলীয় পদার্থে সঞ্চালিত হয়।
উপসংহার
কর্ণের উদ্দীপক হচ্ছে শব্দতরঙ্গ। কর্ণ এই শব্দ তরঙ্গ গ্রহণ করে আমাদের মস্তিষ্কে শব্দ সংবেদন তৈরি করে।