গুরুমস্তিষ্কের গঠন ও কার্যাবলি

মাথার খুলির মধ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সবচেয়ে বড় অংশের নাম মস্তিষ্ক। আর মানব মস্তিষ্কের সবচেয়ে ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে গুরুমস্তিষ্ক। গুরুমস্তিষ্কের অবস্থান মস্তিষ্কের ঊর্ধ্বাংশে। এর গঠনবিন্যাস এবং কার্যাবলি অত্যন্ত জটিল। মানুষের উন্নততর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুমস্তিষ্কের ভূমিকা অপরিসীম।

গুরুমস্তিষ্কের গঠন ও কার্যাবলি

গুরুমস্তিষ্কের উপরিভাগের আয়তন ২০০০ বর্গ সেনিন্টমিটার এবং এতে প্রায় ১৫,০০০ মিলিয়ন কোষ রয়েছে। কোষগুলো ছয়টি স্তরে সজ্জিত আছে। প্রত্যেক স্তরের কোষ ভিন্ন আকৃতিবিশিষ্ট। গঠনের দিক দিয়ে গুরুমস্তিষ্ক দুইটি প্রধান অংশে বিভক্ত। একটি অংশ ডান গোলার্ধ এবং অন্যটি বাম গোলার্ধ নামে পরিচিত। ডান গোলার্ধ দেহের বাম অংশের এবং বাম গোলার্ধ দেহের ডান অংশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। গোলার্ধ দুইটি করপাস-ক্যালোজম দ্বারা পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে।

চিত্রঃ গুরুমস্তিষ্কের গঠন

গুরুমস্তিষ্কের পদার্থ: 

গুরুমস্তিষ্ক দুই ধরনের পদার্থ দ্বারা গঠিত। এদের একটি ধূসর পদার্থ এবং অন্যটি সাদা পদার্থ। ধূসর পদার্থটি স্নায়ুকোষ এবং সাদা পদার্থটি স্নায়ুতন্ত্র দ্বারা গঠিত।

গুরুমস্তিষ্কের খাঁজ: 

গুরুমস্তিষ্কে প্রধান দুইটি খাঁজ বা ফাটল আছে। যথা:

১. রালান্ডো খাঁজ (Frontal Lobe)

২. সিলভিয়াস খাঁজ (Parietal Lobe)

এ খাঁজ দুইটি গুরুমস্তিষ্কের ডান গোলার্ধ ও বাম গোলার্ধকে বিভক্ত করেছে। ফলে গুরুমস্তিষ্ক চারটি ভাগে বিভক্ত। যথা:

১. সম্মুখ ভাগ (Frotel Lobe)

২. মধ্যভাগ (Parietal Lobe)

৩. পশ্চাৎ ভাগ (Occipital Lobe)

৪. নিম্ন ভাগ (Temporal Lobe)

গুরুমাস্তিষ্কের কাজ: 

গুরুমস্তিষ্কটি একটি ধূসর পদার্থের আবরণ দিয়ে ঢাকা। এর নাম মস্তিষ্ক আবরণ। এ মস্তিষ্ক আবরণ যে কাজ সম্পাদন করে তাই গুরুমস্তিষ্কের কাজ। কাজের দিক দিয়ে গুরুমস্তিষ্ক তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন:

১. সংবেদন অঞ্চল (Sensory Area)

২. গতি অঞ্চল (Motor Area)

৩. সংযোগ অঞ্চল (Association Area)

নিচে এদের কাজগুলো আলোচনা করা হলো:

১ . সংবেদন অঞ্চল: 

সংবেদন অঞ্চল বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে সংবেদন গ্রহণ করে স্নায়ু প্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সংবেদন কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়। সংবেদন অঞ্চলের প্রধান অংশগুলো হলো:

ক. শ্রবণ অংশ: গুরুমস্তিষ্কের নিম্ন ভাগ শ্রবণের জন্যে দায়ী। মস্তিষ্কের এ অংশটিই শ্রবণগত উদ্দীপনা গ্রহণের কেন্দ্রস্থল। এ অংশটি নষ্ট হয়ে গেলে মানুষ বধির হয়ে যায়।

খ. দর্শন অংশ: গুরুমস্তিষ্কের পশ্চাৎ অংশ দর্শনের কাজ করে। এ অঞ্চলটি নষ্ট হলে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রবাহ সঞ্চালন করলে দর্শনের অনুভূতি পাওয়া যায়।

গ. স্পর্শ অংশ: গুরুমস্তিষ্কের মধ্যভাগে স্পর্শ অনুভূতি কেন্দ্র। এ অংশটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক সম্বন্ধীয় অনুভূতি পাওয়া যায় না। বিদ্যুৎ প্রবাহের দ্বারা এ অংশটি উদ্দীপিত হলে বিভিন্ন ধরনের শব্দ শোনা যায়। 

ঘ. ঘ্রাণ ও স্বাদ অংশ: গুরুমস্তিষ্কের নিম্নভাগে এ অংশগুলো রয়েছে। এ অংশ নষ্ট হয়ে গেলে মানুষের ঘ্রাণ ও স্বাদের অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়।

২. গতি অঞ্চল: 

রোলান্ডো খাঁজের সম্মুখে গতি অঞ্চল অবস্থিত। চেষ্টার কাজসমূহ গতি অঞ্চল সম্পন্ন করে। গতি নিয়ন্ত্রণকারী এলাকা থেকে গতিবাহী স্নায়ুর মাধ্যমে স্নায়ু প্রবাহ মেরুরজ্জুতে যায় এবং সেখান থেকে প্রান্তীয় স্নায়ুপথে বিভিন্ন মাংসপেশিতে যায়। এ অঞ্চলটি নষ্ট হলে মাংসপেশির সে নির্দিষ্ট অংশগুলো সাময়িক বা স্থায়ীভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়। আবার এ অঞ্চলটি বিদ্যুৎ প্রবাহ দ্বারা উদ্দীপিত করলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা মাংসপেশি নড়াচড়া করতে দেখা যায়।

৩. সংযোগ অঞ্চল: 

সংবেদীয় ও গতির কাজ ব্যতীত মস্তিষ্ক আবরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সংযোগীয় কাজ। সংযোগ অঞ্চলটি বিভিন্ন স্নায়ুপ্রবাহের মধ্যে সংযোগ বিধান করে এবং সমন্বয়-সাধন করে। এর ফলে উচ্চতর মানসিক ক্রিয়াগুলো যেমন: শিক্ষণ, প্রত্যক্ষণ, চিন্তন প্রভৃতি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়। 

উপসংহার 

মানব আচরণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে গুরুমস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের গঠন ও কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। সংগঠনের দিক দিয়ে সবচেয়ে জটিল উন্নত মানসিক ক্রিয়া ও আচরণ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় সংগঠনের নাম গুরুমস্তিষ্ক। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url