সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় একাত্মীভাবনের ভূমিকা

সমাজে বাস করার উপযোগী হবার জন্য ব্যক্তিকে তার কৃষ্টির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হতে হয়। অনেক সময় ব্যক্তি নিজেরই অজ্ঞাতে কৃষ্টির উপাদানগুলোকে আপন করে নেয়। আবার, কখনো কখনো স্বেচ্ছায় এবং সজ্ঞানে কৃষ্টির উপাদানগুলোকে সে আপন করে নেবার চেষ্টা করে। এ কাজগুলো একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়, তা হলো সামাজিকীকরণ-প্রক্রিয়া।

একাত্মীভাবন

একাত্মীয়ভাবনকে আদর্শ প্রতীক নির্বাচনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়। একটি শিশু কেন একজনকে আদর্শ প্রতীক হিসেবে নির্বাচন করে এবং কোন নির্বাচিত ব্যক্তিটির আচরণ অনুকরণ করে, মনোবিজ্ঞানিগণ তার নানাবিধ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। মনোবিজ্ঞানী সেকর্ড ও ব্যাকম্যান (১৯৬৫) সেই ব্যাখ্যাসমূহ নিম্নোক্ত শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন:

১. গৌণ বলবৃদ্ধি: 

একজন ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক হিসেবে নির্বাচিত হন, কারণ তিনি প্রায়ই শিক্ষণকারীদের পুরষ্কৃত করে থাকেন।

২. প্রতিনিধিত্বমূলক বলবৃদ্ধি: 

একজন ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক হিসেবে নির্বাচিত হন, কারণ শিক্ষণকারী তাঁকে পুরষ্কৃত হতে দেখে।

৩. স্নেহপ্রদর্শন থেকে বিরত থাকা: 

কোনো ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক হিসেবে নির্বাচিত হন, কারণ তিনি শিক্ষণকারীকে তার স্নেহ প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে পারেন। 

৪. পদমর্যাদাগত ঈর্ষা: 

একজন ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক রূপে গণ্য হন, কারণ তিনি অন্যদের কাছ থেকে পুরস্কার লাভ করেন এবং শিক্ষণকারী তাঁর সেই পদমর্যাদাকে ঈর্ষা করে।

৫. সামাজিক ক্ষমতা: 

কোনো ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক রূপে নির্বাচিত হতে পারেন; কারণ তিনি কাউকে পুরস্কার প্রদানের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।

৬. শিক্ষণকারীর সাথে সাদৃশ্য: 

কোনো ব্যক্তি আদর্শ প্রতীক হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন, কারণ শিক্ষণকারী তার সাথে নিজের সাদৃশ্য দেখতে পায়।

উপসংহার

সুতরাং একাত্মীভাবন এমন একটি শিক্ষণ-প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলিকে নিজের বৈশিষ্ট্য বলে মনে করে। তবে অনুসরণ ও একাত্মীভাবন এক বিষয় নয়। অনুসরণ হলো অন্যকে অনুকরণ করে। কিন্তু একাত্মীভাবনের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে তার মতো মনে করে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url