ক্ষুধার স্নায়ুবিক ও শারীরবৃত্তীয় ভিত্তি

মানুষের জৈবিক প্রয়োজনের অন্যতম হলো ক্ষুধা। বেঁচে থাকতে হলে ক্ষুধার চাহিদা মেটানো একান্ত আবশ্যক। বেঁচে থাকতে হলে ক্ষুদার চাহিদা মেটানো একান্ত আবশ্যক। ক্ষুদার অনুভূতিসূচক হলো শারীরিক দুর্বলতা, অবসাদ, অস্থিরতা ইত্যাদি। ক্ষুধার্ত প্রাণী খাদ্যের জন্য কর্মতৎপরতা বাড়িয়ে দেয় এবং খাদ্য গ্রহণ না করা পর্যন্ত তার এই কর্মতৎপরতা চলতে থাকে। প্রাণীকে বেশি দিন খাদ্য হতে বঞ্চিত করলে প্রাণী ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অবশেষে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।

ক্ষুধার স্নায়ুবিক ও শারীরবৃত্তীয় ভিত্তি 

নিম্নে ক্ষুধার স্নায়ুবিক ও শারীরবৃত্তীয় কারণ আলোচনা করা হলো: 

১. পাকস্থলী ও ক্ষুধা: 

ক্ষুধার সাথে পাকস্থলী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ সম্পর্কে শারীরতত্ত্ববিদগণ বিভিন্ন গবেষণা করেছেন।  

সাম্প্রতিককালের গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপূর্ণ থাকলে পাকস্থলীর সংগ্রাহক কোষগুলো মস্তিষ্কে সংকেত প্রেরণ করে। অথচ খাদ্য শূন্য পাকস্থলী সংকেত প্রেরণ করার জন্যে কাজ করে না। অর্থাৎ খাদ্যে পরিপূর্ণ পাকস্থলী পরিপূর্ণতার সংকেত মস্তিষ্কে প্রেরণ করে।

২. যকৃত ও রক্ত শর্করা: 

যকৃত ক্ষুধা সংকেত প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যকৃতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো দেহের সংরক্ষিত খাদ্যশক্তিতে গ্লুকোজ ও রক্তে শর্করা হিসেবে রূপান্তর করা, যাতে মস্তিষ্ক ও দেহ এসব খাদ্যশক্তিকে ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া যকৃত রক্তে শর্করার মাত্রা সম্পর্কেও সতকর্তা প্রদান করে।

৩. হাইপোথ্যালামাস ও ক্ষুধা: 

মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের কয়েকটি বিশেষ এলাকা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে অনেকে মনে করেন। 

শারীরত্ববিদগণ দেখেছেন, রক্তে শর্করার পরিমাণের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস এর ভেন্ট্রোমেডিয়াল কেন্দ্র নামের একটি বিশেষ স্থানে স্নায়ুবিক উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রাণীর মধ্যে ক্ষুধার অনুভব জাগিয়ে তোলে। 

২. পুষ্টি ও বর্ধন: 

মনোবিজ্ঞানী ডেভিস শিশুদের নিয়ে একটি গবেষণা করেন। তিনি শিশুদের সামনে প্রায় ৩০টি খাবার রাখতেন এবং তাদের এসব খাবার হতে যা খুশি তা খাওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। ছয় মাস ধরে গবেষণা করে দেখেন যে, শিশুরা সাধারণত শরীরের পক্ষে পুষ্টিকর খাদ্যই খেয়েছে। সুতরাং মানুষ তাই খায়, যা তার শরীরের জন্যে প্রয়োজনীয়। অতএব, ক্ষুধার তাড়না সহজাত কিন্তু প্রাণী কীভাবে তার ক্ষুধার নিবৃত্তি করবে তা শিক্ষালব্ধ।

উপসংহার 

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ক্ষুধা প্রাণীর একটি অন্যতম মৌলিক প্রেষণা। এ প্রেষণাটি দেহ রক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। প্রাণী ক্ষুধার তাড়না দ্বারা যখন অস্থির হয়ে উঠে তখন খাদ্যের জন্য ছোটাছুটি করে। যতক্ষণ পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত অস্থিরতা কমে না। খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে প্রাণী শান্ত ও স্থির হয়। আর মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অঞ্চলটি এরূপ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত থাকে। এটি একটি জন্মগত প্রেষণা, শিক্ষালব্দ নয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url