ব্যক্তি প্রত্যক্ষণ ও নির্ণয়কারী উপাদানসমূহ

 ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণ সামাজিক প্রত্যক্ষণের সব বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণ মনোবিজ্ঞানে প্রত্যক্ষণ বিষয়টিকে অনেক উপরে স্থান দিয়েছে। পার্থিব জীবনে আমরা বিভিন্ন মানুষের সংস্পর্শে আসি ও তাদের কথা শুনে থাকি। তাদের মধ্যে কেউ অপরিচিত আবার কেউ-বা পরিচিত। কিন্তু তারা প্রত্যেক ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের দৃষ্টান্ত।

ব্যক্তি প্রত্যক্ষণ 

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা অন্য ব্যক্তির ব্যবহারের বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে বিশেষ কোনো ধরনের ধারণা করে থাকি তাকে ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণ বলা হয়। প্রত্যক্ষণ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করি না। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত মতামত, ব্যক্তিনিষ্ঠ মূল্যায়ন পছন্দ অপছন্দ অথবা অনুমানেরও সাহায্য নিই। এজন্যই ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষণকে একটা ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করতে হয়। কোনো ব্যক্তির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে ধারণা গঠনের প্রত্যক্ষণমূলক প্রক্রিয়াকেই ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণ বলে। পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যার জন্য ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের দরকার। কারণ চিন্তন, ভাবাবেগ এবং প্রত্যক্ষণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য ব্যক্তি সম্বন্ধে আমাদের যে প্রত্যক্ষণ তার জন্য নিম্নলিখিত ঘটনাসমূহ দায়ী-

ক. মূল্যায়নের জন্য প্রত্যক্ষী তথা প্রত্যক্ষকারী কী পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

খ. প্রত্যক্ষণ এবং অন্যান্য ব্যক্তির মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের ব্যাপ্তি কতটুকু।

গ. কী পরিমাণে প্রত্যক্ষী এবং অন্য ব্যক্তির ভেতর সম্পর্কে স্থাপিত হয়েছে এবং এ সম্পর্কটি উত্তমরূপে স্থায়ী হয়েছে কিনা। ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের মাধ্যমে মানুষ তার নিজস্ব এবং পারিপার্শ্বিক সমস্ত বিষয়ের আলোকে নিজেকে উন্নয়ন করা ও ব্যক্তি উন্নয়ন সম্ভব হয়। ব্যক্তি তার নিজেকে উন্নতি কারতে ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণে গুরুত্ব দেয়।

ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণ কখনো সংগতিপূর্ণ গুচ্ছের ভিত্তিতে হয় আবার কখনো অসংগতিপূর্ণ সংলক্ষণগুচ্ছ দ্বারা শুধু একজন ব্যক্তির বর্ণনা দেয়া যেতে পারে। প্রত্যক্ষণকারীর পরিপক্বতা ও তার নিজ ব্যক্তিত্ব বৈশিষ্ট্য অনুসারে ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের ভিন্নতা প্রত্যক্ষ করা যায়। 

ব্যক্তি প্রত্যক্ষণের আচরণগত উপাদান

ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের বিভিন্ন আচরণগত উপাদান রয়েছে। নিম্নে সেগুলো বর্ণনা করা হলো-

১. অতীত অভিজ্ঞতা: 

ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের বিভিন্ন আচরণগত উপাদানের মধ্যে অতীত অভিজ্ঞতা অন্যতম। যদি কোনো ভুলবশত কোনো দ্রব্য কিনতে বেশি টাকা দিয়ে ফেলে তখন সে সাবধান হয়ে যায় এবং পরবর্তীকালে বেশি টাকা দিতে ভুল করে না। এটা অতি অভিজ্ঞতার ফলশ্রুতি।

২. লক্ষ্য: 

ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের আচরণগত উপাদনের মধ্যে লক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণে লক্ষ্য জরুরি। লক্ষ্য ব্যতীত কোথাও পৌঁছানো যায় না। যদি কোনো ব্যক্তি তার শৈশবে লক্ষ্য স্থির করে যে সে বড়ো হয়ে ডাক্তার কিংবা অন্য কিছু হবে তবে সে তার লক্ষ্য অনুযায়ী সাধারণত তাই হবে। তার লক্ষ্য তার প্রত্যক্ষণকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

৩. মনোভাব: 

ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণে আচরণগত উপাদান হিসেবে মনোভাবের গুরুত্ব অপরিসীম। মনোভাব কোনো ব্যক্তির আচরণগত উপাদান। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি বার বার পরীক্ষায় ফেল করে, যদি সে পাস করার মনোভাব নিয়ে পড়তে বসে অবশ্যই সে সফল হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

৪. প্রেষণা: 

প্রেষণা প্রত্যক্ষণ-বিকাশে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। আমাদের অভ্যন্তরীণ প্রেষণা, তাগিদ, অনুরাগ ইত্যাদি নির্ধারণ করে কী বিষয়ের বা বস্তুর ওপর আমাদের মনোযোগ আকৃষ্ট হবে। তাই প্রেষণা ব্যক্তির আচরণগত উপাদানের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

৫. প্রত্যাশা: 

প্রত্যাশা ব্যক্তি-উপাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রত্যাশা ব্যতীত কোনো কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই কোনো ব্যক্তি যদি তার প্রিয় কোনো বস্তু পেতে চায় তাকে প্রত্যাশা করতে হয়। প্রত্যাশার ফল হিসেবে প্রত্যক্ষণে তা সাড়া জাগায়।

৬. ধারণা: 

ধারণা প্রত্যক্ষণে আচরণগত উপাদানের গুরুত্ব বহন করে থাকে। যে সামাজিক পরিবেশে বাস করে সেই সামাজিক পরিবেশের বস্তু বা মানুষ সম্পর্কে তার ধারণা থাকে। ফলে সে ধারণার ওপর ভিত্তি করে তার প্রত্যক্ষণ বিকশিত হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাদের দেশে কোনো মেয়ে যদি পর্দা না-করে তবে সাধারণভাবে আমরা তাকে খারাপ মেয়ে হিসেবে ধারণা করে থাকি।

৭. প্রয়োজন: 

প্রত্যক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে প্রয়োজন। মানুষ প্রয়োজনের তাগিদেই বিভিন্ন বস্তু প্রত্যক্ষণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি যদি মনে করে, তার অনেক টাকার প্রয়োজন তবে স্বাভাবিকভাবেই সে টাকার দিকে প্রত্যক্ষণ করবে।

৮. প্রস্তুতি: 

প্রস্তুতি ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের আচরণগত উপাদানের একটি অন্যতম দিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, কোনো ছাত্র যদি পরীক্ষার পূর্বে কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ না-করে তবে সে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষার পূর্বের রাত্রে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে চাইবে।

উপসংহার 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ব্যক্তি-প্রত্যক্ষণের উপাদানগত আচরণ প্রত্যক্ষণকে আরো জাগ্রত ও উপাদেয় করে তোলে। এর মাধ্যমে প্রত্যক্ষণ আরো পরিষ্কার, পরিস্ফুটিত ও সুন্দর হয়ে থাকে। তাই আমাদের বাস্তব জীবনে আচরণগত উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url