কাঠামোবাদ প্রতিষ্ঠায় উইলহেম উন্ডের অবদান
পশ্চিম জার্মানির ছোটো একটি গ্রামে ১৮৩২ সালে উইলহেল্ম উন্ড জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৫ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি চিকিৎসাবিদ্যায় এমডি সম্পন্ন করলেও তিনি ডাক্তারি পেশার চেয়ে বিজ্ঞানী হওয়ার প্রতি বেশি আগ্রহী হন।
কাঠামোবাদ প্রতিষ্ঠায় উইলহেল্ম উন্ডের অবদান
১৮৫৫ সালে তিনি বার্লিনে জোহান্স মূলারের সাথে বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্মে নিজেকে আত্মনিয়োজিত করেন। পরের বছর তিনি বার্লিন থেকে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্যাবর্তন করে হারম্যান শুন হেল্লহজের গবেষণা-সহকারী হন। ১৮৬৪ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৭৫ সালে তিনি লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান। মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যলয়ে গবেষণা ও পাঠদানে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। কাঠামোবাদ প্রতিষ্ঠায় উন্ডের অবদান নিম্নে স্বল্প-পরিসরে তুলে ধরা হলো-
গবেষণাগার স্থাপন
১৮৭৯ সালে উইলহেম উন্ড (১৮৩২-১৯২০) জার্মানির লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Leipzig) মনোবিজ্ঞানের প্রথম গবেষণাগার স্থাপন করেন। এটি ছিল মনোবিজ্ঞানের প্রথম গবেষণাগার। তাই এই জন্য ইতিহাসবিদগণ ১৮৭৯ সালকে মনোবিজ্ঞানের জন্মদিন বলে অভিহিত করেছেন।
গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশকরণ
উন্ড মনোবিজ্ঞানের জটিল বিষয়কে খুব সহজ, সরল ও সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করতেন। ফলে অতিঅল্প সময়ের মধ্যে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক ছাত্রকে তাঁর সাথে কাজ করার জন্য আগ্রহী করে তোলেন। তাঁর ডক্টোরাল ছাত্ররা হলেন অসওয়াল্ড কুলপি, হুগো মুসটেনবার্গ, জেমস ম্যাককিন ক্যাটেল, জি স্ট্যানলি হল, এডওয়ার্ড বি. টিচেনার, লাইটনার উইটিমার, জেমস মার্ক বলডইউন। উইন্ড পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন তিন দশক ধরে। এই সময়ে তার অধীনে ১৮৬টি ডক্টরিয়াল প্রবন্ধ বের হয়েছিল (৭৫টি ছিল দর্শনের উপর এবং ১১৬ ছিল মনোবিজ্ঞানের উপর)। ১৮৮১ সালে তিনি একটি মনোবৈজ্ঞানিক জার্নাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
গবেষণাকর্ম
উন্ড মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ব্যক্তি। Boring-এর মতে ১৮৫৫-১৯২০ সালের মধ্যে উন্ড ৫৩,৭৩৫ পৃষ্ঠা লিখেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রকাশনাসমূহ হলো-Contributions to the Theory of Sense Perception (1862), Principles of Physiological Psychology (1874), Human and Animal Psychology (1894) প্রভৃতি।
পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের জনক
পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের জনক হিসেবে উইলহেল্ম উন্ডকেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষণমূলক মনোবিজ্ঞানের বিকাশে উন্ডের পূর্বে হেল্মহজ (Helmholtz), ওয়েবার (Weber) এবং ফেকনার (Fechner) কাজ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। কিন্তু এদের সকলের মধ্যে উন্ড সবচেয়ে বেশি পদ্ধতিগত সাফল্য অর্জন করেন। তিনি তাঁর গবেষণাসমূহ নির্দিষ্ট পরীক্ষামূলক পদ্ধতির ও প্রক্রিয়ার সাহায্যে পরিচালনা ও বিশ্লেষণ করতেন। ১৮৬২ সালের উন্ড একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। এই গবেষণায় তিনি পাশে (চিত্র) এ দেখানো ঘড়িটি ব্যবহার করেন। গবেষণায় তিনি দেখতে পান, মানুষের ১/১০ সময় লাগে তার মনোযোগ ঘণ্টার শব্দ থেকে ঘণ্টার অবস্থানে যেতে। উন্ড তাঁর 'Thoughts Meter'-এর মাধ্যমে দেখান যে, মানুষ একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারে এবং একটি চিন্তা থেকে অন্য চিন্তায় মনোযোগ দিতে মানুষের ১/১০ সেকেন্ড সময় লাগে। এই গবেষণার পর তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী হন।
ঐচ্ছিকতাবাদ
উন্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা হলো ইচ্ছার ধারণা। ইচ্ছার ধারণা ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া এবং মনোযোগের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। উন্ডের মতে, ইচ্ছাই হলো কেন্দ্রীয় বিষয় যার মাধ্যমে আমরা মনোবিজ্ঞানের প্রধান সমস্যাগুলোর উত্তর খুঁজতে পারি। উন্ড বিশ্বাস করেন-
- কেন্দ্রীয় ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া (Central Volitional Process) চিন্তনের উপাদান নিয়ে কাজ করে। কেন্দ্রীয় ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া বাহ্যিক উদ্দীপকগুলোর রূপ, গুণ ও মানের উপলব্ধি তৈরি করে যা ঐ উদ্দীপকে বা চিন্তনের উপাদানে থাকে না।
- কেন্দ্রীয় ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া (Volitional Process) দ্বারা যা মনোযোগের কেন্দ্রে আসে তা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ হয়।
- মনোযোগ ও আচরণ উদ্দেশ্য (Purpose) দ্বারা পরিচালিত হয় যা প্রেষণা দ্বারা প্রভাবিত হয়।
উন্ড তাঁর মতবাদের নামকরণ করেন ঐচ্ছিকতাবাদ (Voluntarism)। তিনি ইচ্ছা, পছন্দ এবং উদ্দেশ্যের উপর জোর দিয়েছেন। উন্ডের ঐচ্ছিকতাবাদের লক্ষ্য চেতনার স্বরূপ উন্মোচন করা।
মনোবিজ্ঞানের লক্ষ্য
উন্ডের লক্ষ্য ছিল যথার্থ ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতির প্রয়োগ করে চেতনার স্বরূপ উন্মোচন করা। অভিজ্ঞতা-নির্ভর চেতনার উপাদানের স্বরূপ নির্ণয় করা এবং উপাদানগুলোর ভেতর সম্পর্ক নির্দেশ করা। তিনি অভিজ্ঞতার মৌলিক কাঠামোর উপাদান সম্পর্কে জানতে এবং একটি নীতির ভিত্তিতে আমাদের প্রতিদিনের চেতনাকে সমন্বিত করতে অন্তর্দর্শন-পদ্ধতির প্রয়োগ করেন।
উন্ড দেখতে পান যে পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞান শুধু তাৎক্ষণিকভাবে সংঘটিত চেতনা ও সরল মানসিক প্রক্রিয়া বোঝার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়া এবং তার ফলাফল জানার ক্ষেত্রে এটি অকার্যকর। তাই গোষ্ঠী মনোবিজ্ঞান (Volker Psychologie')-এর পদ্ধতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণ-পদ্ধতির প্রয়োগ আলোচনা করেন। এসবে উন্ড পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানের দুইটি লক্ষ্য বর্ণন করেন; যথা-
- চিন্তনের মৌলিক উপাদান উন্মোচন করা
- কীভাবে মানসিক উপাদান একত্র হয়ে অনেক জটিল মানসিক অভিজ্ঞতা তৈরি করে সে নীতি উন্মোচন করা
উন্ড গ্যালিলিও, অগাস্ট কোঁত (Comte) এবং ইমানুয়েল কান্ট (Kant)-এর সাথে দাবিকে ভুল প্রমাণ করেন। তারা দাবি করতেন মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞান হতে পারে না। তিনি হার্বাটের সাথেও দ্বিমত পোষণ করতেন। কারণ তিনি মনোবিজ্ঞানকে গাণিতিক বিজ্ঞান বলেছেন কিন্তু গবেষণামূলক বিজ্ঞান নয়। কিন্তু উন্ড মনোবিজ্ঞানকে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
মনোদৈহিক সমান্তরালবাদ
ওয়েবার, ফেকনার ও অন্যান্য মনোবিজ্ঞানীর মতো তিনিও দার্শনিক স্পিনোজার দেহ-মন সমান্তরালবাদকে গ্রহণ করেন। উন্ডের মতে, প্রতিটি শারীরিক ঘটনার একটি সমান্তরাল মানসিক ঘটনা রয়েছে। আবার প্রতিটি মানসিক ঘটনার একটি সমান্তরাল শারীরিক দিক রয়েছে। তিনি মনোবিজ্ঞানকে আনুষ্ঠানিকভাবে শারীরবৃত্তীয় মনোবিজ্ঞান বলতেন। তবে তিনি শারীরবৃত্তীয় অনুধ্যানের মাধ্যমে মানসিক প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যার বিষয়ে কিছু স্পষ্ট করেননি।
পরোক্ষ এবং তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা
তিনি বিশ্বাস করেন, বিজ্ঞান অভিজ্ঞতাভিত্তিক। মনোবিজ্ঞান এর ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু মনোবিজ্ঞানে যে অভিজ্ঞতার ধরন ব্যবহার করা হয় তা সম্পূর্ণ আলাদা। অন্যান্য ভৌত বিজ্ঞানের ভিত্তি হলো মধ্যমাগত বা পরোক্ষ অভিজ্ঞতা (Mediate Experience) আর মনোবিজ্ঞানের ভিত্তি হলো সদ্য বা তাৎক্ষণিক অভিজ্ঞতা (Immediate Experience)।
উন্ডের অন্তর্দর্শন
উন্ডের চেতনা সম্পর্কে গবেষণার পদ্ধতি হলো অন্তর্দর্শন। উন্ডের অন্তর্দর্শন- পদ্ধতিতে সেন্ট অগাস্টিন (st. Augustine) এবং রেনে দেকার্তের ধারণার প্রভাব ছিল। কিন্তু উন্ডের অন্তর্দর্শন অভিজ্ঞতাবাদী এবং সংবেদনবাদীদের গবেষণায় ব্যবহৃত অন্তর্দর্শন থেকে ভিন্ন ছিল। উন্ড যে অন্তর্দর্শন-পদ্ধতির প্রয়োগ করতেন তা পরীক্ষণমূলক অন্তর্দর্শন নামে অধিক পরিচিত।
উন্ডের মতে,
অন্তর্দর্শন-পদ্ধতি হলো পরীক্ষণমূলক পরিবেশে চেতনার বিষয়বস্তুকে নিয়ন্ত্রিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা।
অন্তর্দর্শন হলো চেতনার ধারা ও স্বরূপকে নিজে অবলোকন করে- এর মধ্য দিয়ে চেতনাকে বিশ্লেষণ করতে পারা ও মানসিক মৌল উপাদানগুলো কীভাবে সংশ্লেষিত হচ্ছে তা ধরতে পারা। উন্ড অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে চেতনার যে স্বরূপ পাওয়া যায় তার বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করার জন্য পরীক্ষণ-পদ্ধতির উপর অধিক জোর দিয়েছেন। উন্ড কখনো পরীক্ষণ ছাড়া অন্তর্দর্শন-পদ্ধতির কথা বলেননি। তথাপি তিনি অন্তর্দর্শনের জন্য প্রশিক্ষণের উপর আশ্যকতা উল্লেখ করেছেন।
চিন্তনের উপাদান
উভের মতে মানসিক অভিজ্ঞতার প্রধানত দুই ধরনের; যথা- সংবেদন এবং অনুভূতি। সংবেদন হলো মানসিক অভিজ্ঞতার বস্তুগত বা বাস্তব উপাদান এবং অনুভূতি হলো চেতনার আত্মগত উপাদান।
সংবেদন (sensation): সংবেদন তখনই ঘটে যখন সংবেদন-ইন্দ্রিয় উদ্দীপিত হয় এবং উদ্দীপনা মস্তিষ্কে পৌঁছায়। দর্শনেন্দ্রিয় বা চোখ, শ্রবণেন্দ্রিয় বা কান, স্পর্শেন্দ্রিয় বা ত্বক, ঘ্রাণেন্দ্রিয় বা নাসিকা এবং স্বাদেন্দ্রিয় বা জিহ্বার কার্যকারিতার মধ্যদিয়ে বিভিন্ন প্রকারের সংবেদন তৈরি হয়।
সংবেদনের দুটি মাত্রা রয়েছে; যথা-
১. বৈচিত্র্য বা প্রকারভেদ (Modality): মানুষ পাঁচ ধরনের ইন্দ্রিয় থেকে পাঁচ প্রকারের সংবেদন লাভ করে; যেমন- দর্শন, শ্রবণ, স্বাদ, ঘ্রাণ ও স্পর্শ।
২. তীব্রতা (intensity): সংবেদন বাহ্যিক উদ্দীপকের তীব্রতার উপর নির্ভরশীল। উদ্দীপকের তীব্রতা বাড়লে সংবেদনের তীব্রতা বাড়ে, উদ্দীপকের তীব্রতা কমলে সংবেদনের তীব্রতা কমে। দর্শন উদ্দীপকের তীব্রতা অনুসারে- অস্পষ্ট, উজ্জ্বল, স্পষ্ট প্রভৃতি রূপে প্রতিভাত হয়।
অনুভূতি (Feelings): অনুভূতি কোনো ইন্দ্রিয়ের মধ্যে দিয়ে আসে না। অনুভূতি ব্যাখ্যায় উন্ড ত্রিমাত্রিক মতবাদের (tridimensional theory of feeling) অবতারণা করেন। উন্ড একটি সংগীত অনুষ্ঠানে গান শোনার সময় লক্ষ্য করেন যে, কিছু বিট শুনতে ভালো লাগে কিছু বিট শুনতে ভালো লাগে না। আর এই অন্তর্দর্শন দ্বারা তিনি ত্রিমাত্রিক মতবাদ দিয়েছিলেন। তিনি অনুভূতির তিনটি মাত্রা উল্লেখ করেন; যথা-
- আনন্দদায়ক-বেদনাদায়ক (Pleasant-Unpleasant)
- স্বস্তিকর-অস্বস্তিকর (Relaxed-Strained)
- শান্ত-উত্তেজিত (Calm-Excited)
এখানে উল্লিখি প্রতিটি মাত্রার তীব্রতা কম বা বেশি হতে পারে। তার মতে, যে কোনো চেতন অনুভূতি ত্রি-মাত্রিক অনুভূতির কোথাও না কোথাও আছে। তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, বিপরীত ঘটনা একে অপরকে তীব্রতর করে। উদাহরণ স্বরূপ ঝাল খাওয়া পর মিষ্টি খেলে তা আরও মিষ্টি লাগবে এবং একটি দুঃখজনক ঘটনার পর সুখ আরও বেশি সুখকর অনুভব হয়।
গোষ্ঠী মনোবিজ্ঞান
উন্ডের পরীক্ষণ মনোবিজ্ঞানকে বিজ্ঞানের আলাদা বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক কাজ করেছিলেন। তিনি বহু বছর ব্যয়ে অসংখ্য পরীক্ষা করেছেন। তারপর তিনি অনুধাবন, করেন, উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়া শুধু পরীক্ষণ-পদ্ধতির মাধ্যমে জানা সম্ভব নয়। উন্ডের মতে উচ্চতর মানসিক প্রক্রিয়া জানা যায় সংস্কৃতিক উপাদান, যথা- ধর্ম, সামাজিক প্রথা, ভাষা, ইতিহাস, নৈতিকতা, চিত্রকলা এবং লোকনীতি প্রভৃতির গবেষণার মাধ্যমে। উন্ড এসবের উপর ২০ বছর গবেষণা করেছিলেন এবং দশ খণ্ডের Völkerpsychologie (Group/ Cultural/ Ethinic Psychology) প্রকাশ করেছিলেন। উন্ড তার Völkerpsychologie বইতে বর্ণনা করেন 'পরীক্ষণ পদ্ধতি' মনোবিজ্ঞানের একটি মাত্র দিক; কেননা মনোবিজ্ঞানের বহুদিক পরীক্ষাগারে পরীক্ষণ-পদ্ধতিতে আবদ্ধ করা যায় না। সেজন্য মনোবিজ্ঞানে পরীক্ষণ-পদ্ধতি ছাড়াও অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক; পদ্ধতি যেমন- সামাজিক পর্যবেক্ষণ (Social observation), দলবদ্ধ মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিজ্ঞাননিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ বা ক্ষেত্র পর্যবেক্ষণ (field Study) এবং জন্মের পর থেকে বয়স ক্রমিক শিশুর দৈহিক, আবেগিক ও সামাজিক ক্রমবিকাশের দীর্ঘচ্ছেদ অধ্যয়নর (Longitudinal Study) প্রভৃতি উল্লেখ করেন।
উপসংহার
উইলহেল্ম উন্ড মনোবিজ্ঞানের ব্যাপক গবেষণা পরিচালনা করেন। এবং তিনি মনোবৈজ্ঞানিক অনধ্যানের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করেন এবং মনোবিজ্ঞানকে দর্শনের নাগপাশ থেকে ছিন্ন করে বৈজ্ঞানিক পটভূমিতে দাঁড় করান। তিনি কাঠামোবাদের (Structuralism) নীতিগুলো প্রণয়ন করেন এবং তাঁর ছাত্র আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডওয়ার্ড টিচেনার কাঠামোবাদের প্রতিষ্ঠা করেন।