যে কোনো দুটি সম্ভাবনা ভিত্তিক নমুনায়ন: স্তরিত ও গুচ্ছ নমুনায়ন
যে নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের অন্তর্গত প্রতিটি এককের নমুনায়ন অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সমান সম্ভাবনা থাকে তাকে সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে। সম্ভাবনা নমুনায়নের অন্যতম প্রধান দুটি পদ্ধতি হলো স্তরিত নমুনায়ন ও গুচ্ছ নমুনায়ন পদ্ধতি।
ক. স্তরিত নমুনায়ন (Stratified sampling)
যখন সমগ্রক (Population) এর প্রতিটি একক, সমজাতীয় না হয় কেবল তখনই এই পদ্ধতি ব্যবহারযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। কোনো সমগ্রককে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভক্ত করে: প্রতিটি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় নমুনা দৈবচয়ন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে স্বরিত নমুনায়ন বলে। এই পদ্ধতিতে সমগ্রকে বিশেষ উদ্দেশ্যে কতগুলো অংশ ভাগ করা হয়। এই ভাগগুলোকে বলা হয় স্তর (strata)। প্রতিটি স্তর থেকে নমুনা দৈবভাবে সংগ্রহ করা হয়।
যেমন- কোনো একটি বয়স গ্রুপ বা অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপ বা স্তর বিন্যাস আকারে সাজানো হয়, যেখান থেকে পরবর্তীকালে দৈবচয়নের মাধ্যমে নমুনায়ন করা হয়। স্তর বিন্যস্ত দৈব নমুনায়নকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
আনুপাতিক ও অনানুপাতিক স্তর বিন্যাস নমুনায়ন। যথা-
ক) আনুপাতিক নমুানয়ন: নমুনায়নের ক্ষেত্রে সমগ্রকের সাথে যদি নমুনার মিল থাকে তবে তাকে আনুপাতিক স্তর বিন্যস্ত দৈব নমুনায়ন বলে। এখানে প্রত্যেকটি স্তরে সমান সংখ্যক উপকরণ থাকে এবং এগুলো পরস্পর সমধর্মী হয় এবং নমুনার সাথে জনসমষ্টির অনুপাতের মিল থাকে।
খ) অনানুপাতিক নমুনায়ন: সমগ্রকের সাথে নমুনার মিল থাকে না অর্থাৎ স্তরগুলো ভিন্নধর্মী হয় তাকে অনানুপাতিক স্তর বিন্যস্ত দৈবনমুনায়ন বলে। অনানুপাতিক নমুনায়নই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। কেননা এখানে বিভিন্ন গ্রুপ, স্তর এবং বিভাগের নমুনাগুলো থাকে যা আনুপাতিক নমুনায়নে থাকে না।
স্তরিত নমুনায়নের সুবিধাসমূহ
- এ পদ্ধতির নমুনা অধিক প্রতিনিধিত্বশীল।
- এ পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহে সময় ও অর্থের ব্যয় কম হয়।
- সমগ্রক অসমজাতীয় স্বত্ত্বেও এ পদ্ধতিতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।
- এটি দৈবচয়িত নমুনায়ন এবং নিয়মতান্ত্রিক নমুনায়নের সাথে ব্যবহার করা যায়।
- উপদলের সদস্যদের অনুপাত জানা গেলে এ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত নমুনা অনেক বেশি প্রতিনিধিত্বশীল হয়।
- কিছু কিছু ভৌগোলিক অবস্থানে এটি অনেক বেশি নমনীয় ও প্রয়োগযোগ্য এবং পরিচালনা সহজ।
- উপদলগুলোর মধ্যে সহজেই সম্পর্ক ও পার্থক্য নির্ণয় করা যায়।
স্তরিত নমুনায়নের অসুবিধাসমূহ
- সমগ্রকে সঠিকভাবে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করতে না পারলে এ পদ্ধতির নমুনা নির্ভরযোগ্যতা হারায়।
- এ পদ্ধতিতে প্রত্যেক স্তর হতে নমুনা সংগ্রহ করতে হয় বিধায় সময় বেশী লাগে।
- সমগ্রক সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান থাকতে হয়।
- সময় ও অর্থ বেশি লাগে।
- স্তর দলের অনুপাত জানা না থাকলে নমুনায়ন সঠিক হয় না।
- তথ্যবিশ্ব সম্পর্ক সঠিক ও সর্বশেষ তথ্য না থাকলে সঠিকভাবে করা কঠিন।
- গবেষকের জন্য অধিক সক্রিয় হওয়ার এবং অধিক শ্রমের প্রয়োজন হয়।
- তথ্যবিশ্বের সদস্যদের বয়স এবং সামাজিক পঠভূমিগত অবস্থার বিভিন্নতায় বাস্তবায়ন কঠিন হয়।
খ. গুচ্ছ নমুনায়ন (Cluster sampling)
সাধারণত ব্যপক নমুনা জরীপে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রথমে সমগ্রকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা হয়। প্রত্যেক অংশকে গুচ্ছ বলা হয়। এই গুচ্ছগুলো সমজাতীয় হলেও প্রত্যেক গুচ্ছের উপাদন সমূহ অসমজাতীয়। সরল দৈবচয়ন পদ্ধতিতে গুচ্ছগুলো হতে কয়েকটি গুচ্ছ নির্বাচন করা হয় এবং নির্বাচিত গুচ্ছগুলোর প্রতিটি একক হতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এভাবে তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিকে গুচ্ছ নমুনায়ন বলে। ইহা স্তরিত নমুনায়নের বিপরীত পদ্ধতি।
যেমন: চট্টগ্রাম শহরের পরিবার সমূহ সমগ্রক হলে, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের পরিবার সূমহ একেকটি গুচ্ছ। এই গুচ্ছ গুলো হতে নির্বাচিত ৩টি ওয়ার্ডের প্রত্যেক পরিবার হতে তথ্য সংগ্রহ করার পদ্ধতিই গুচ্ছ নমুনায়ন।
গুচ্ছ নমুনায়নের সুবিধাসমূহ
- সমগ্রকের আকার খুব বড় হলে এ পদ্ধতিতে নমুনা সংগ্রহ করা সুবিধাজনক।
- সমগ্রকের পূর্ণ তালিকা না থাকলেও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।
- এক্ষেত্রে গুচ্ছগুলোকে দৈবভাবে নির্বাচন করা হয় বলে পক্ষপাতিত্বের কোন সুযোগ নেই।
- এ পদ্ধতিতে স্বল্প ব্যয়ে এবং স্বল্প সময়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
গুচ্ছ নমুনায়নের অসুবিধাসমূহ
- এ পদ্ধতিতে সঠিকভাবে গুচ্ছায়ন সম্ভব না হলে নমুনা প্রতিনিধিত্বশীল হয় না। ফলে গোটা তথ্য বিশ্বের সকল সদস্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক হয় না।
- গুচ্ছ নির্বাচনে পক্ষপাতিত্ব ঘটতে পারে।
- এ পদ্ধতিতে নমুনায়ন ত্রুটি সরল দৈব নমুনায়নের চেয়ে বেশী।
- গুচ্ছের আকারের মধ্যে পার্থক্য থাকলে নমুনায়ন যথাযথ নাও হতে পারে।
উপসংহার:
স্তরিত ও গুচ্ছ নমুনায়ন প্রায় একই রকম মনে হলেও দুইটি পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক কিছু পার্থক্য রয়েছে।