একটি নমুনা জরিপ নির্বাহ করার ধাপসমূহ

যে কোন গবেষণার ক্ষেত্রে জরিপ কার্য পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে জরিপের পর্যায়ক্রমিক কতকগুলো ধাপকে অনুসরণ করতে হয়। আর এসব ধাপগুলোকে বিভিন্ন কাজে পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত ও উপস্থাপিত করতে হলে জরিপের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সকল কাজকে কতিপয় পর্যায়ে নির্দিষ্টভাবে বিভাজন করেই আলোচনা করতে হয়। মোজার ও কাল্টন কতকগুলো ধাপের কথা বলেছেন।

নমুনা জরিপ নির্বাহ করার নকশার ধাপসমূহ

নিম্নে জরিপের প্রধান প্রধান ধাপসমূহ আলোচনা করা হলো:

১) উদ্দেশ্য ও সম্পদ (Objectives and Resources): 

যে বিষয়ে অনুসন্ধানকার্য পরিচালিত হবে তার উপর ভিত্তি করে অনুসন্ধানের প্রধান উদ্দেশ্যাবলি নির্দিষ্ট করা জরিপের প্রধান কাজ। জরিপের প্রথম পর্যায়েই গবেষককে প্রয়োজনীয় অর্থ বা সম্পদের চিন্তা করতে হবে। সঙ্গত কারণেই তার উচিত একটি খসড়া বাজেট প্রণয়ন করা যাতে পুরো জরিপের কাজ, সম্ভাব্য অর্থ, সময়, শ্রম ইত্যাদির একটা হিসেব উল্লেখ থাকবে।

২) জরিপের পরিধি (Coverage): 

এ পর্বে প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে, সমগ্রকের সংজ্ঞা প্রদান, এর ভৌগোলিক, জনসংখ্যা তাত্ত্বিক এবং অন্যান্য সীমারেখা নির্দিষ্ট করা। যেমন:

(ক) কোন নির্দিষ্ট এলাকার পুরো জনগণ নাকি তার অংশবিশেষ জরিপের আওতাভুক্ত হবে তা নির্দিষ্ট করতে হবে। 

(খ) নমুণা নির্বাচন এবং নিরূপনকারীর সাথে কি ধরণের ব্যবহার করা উচিত তা পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

৩) পরিকল্পনা ও নকশা প্রণয়ন (Planning and making Design): 

জরিপের একটি অন্যতম ধাপ হচ্ছে সমস্যার জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সঠিক নকশা প্রণয়ন করা। জরিপ কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন একটি নির্দেশনা। সঠিক নকশা জানা থাকলে সহজেই জরিপ কাজ পরিচালনা করা যায়। 

৪) তথ্য সংগ্রহ (Collection of Data): 

তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য রেখে পদ্ধতি নির্ধারণ করতে হবে। যেমন- জনতার আচরণের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ কৌশল অবলম্বন করতে হয়। সাধারণ জনগণের জরিপে অনেক জটিলতা উদ্ভব হয়, আর তা ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমেই সমাধা করা সম্ভব।

৫) প্রশ্নমালা (Questionnaire): 

জরিপের এ ধাপে গবেষকের কাজ হচ্ছে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করা। জরিপের বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি উত্তম প্রশ্নমালা প্রণয়ন করতে হবে। অধিকাংশ জরিপেই কোন না কোন ধরনের প্রশ্নমালা ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

৬) ভ্রান্তিসমূহ (Errors): 

জরিপের প্রতিটি পর্যায়েই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নমুনায়ন থেকে শুরু করে প্রশ্নমালা প্রণয়ন, সাক্ষাকার গ্রহণ, উপাত্তসমূহের সংকেতীকরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ব্যাখ্যাদানের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অপর্যাপ্ততা বা ভুল থেকে যেতে পারে। তাই গবেষককে ভ্রান্তির সম্ভাব্য উৎসসমূহ চিহ্নিত করতে হবে এবং ভ্রান্তির মাত্রা হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৭) মাঠকর্ম (Field works): 

মাঠকর্ম জরিপের অন্যতম কার্যকরী পর্যায়। জরিপের উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রয়োজনীয় উপাত্ত সংগ্রহের যাবতীয় কাজ মাঠকর্মের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়। মাঠকর্মে নিয়োজিত গবেষণা সহকারীর সততা ধৈর্য্য এবং নিষ্ঠা একটি ফলপ্রসূ জরিপের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। গবেষককে জরিপকার্য পরিচালনার জন্য অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সতর্ক হতে হয়।

৮) তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিশ্লেষণ (Data Processing and Analysis): 

তথ্য সংগ্রহ সমাপ্তির পর Tabulation ও সারণির সাহায্যে তথ্য প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। সর্বশেষে আসে বিশ্লেষণ, ফলাফল নির্ধারণ ও প্রতিবেদন উপস্থাপন। এ পর্যায়ে সহজ গতিতে জরিপ পরিচালনার জন্য মাঠ পর্যায়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সংকেতায়ন তালিকায় এবং আনুষঙ্গিক সারণীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি সম্পাদনা কৌশল নির্ধারণ করা উচিত।

৯) ফলাফল উপস্থাপন (Presentation of Report): 

জরিপ পদ্ধতির সর্বশেষ অথচ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হলো ফলাফল বা প্রতিবেদন উপস্থাপন। এ পর্যায়ে গবেষণা ফলাফলের বিবরণ দেওয়া হয়। মূলত তথ্য সংগ্রহ সমাপ্তির পর এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরী করা হয়।

১০) দলিলপত্র (Document): 

গবেষণার সকল পর্যায়গুলো অতিক্রম করার পর শেষ পর্যায়ে এসে জরিপের বিবরণ ও দলিল ছাপানো হয়, যার মধ্যে থাকে প্রশ্নমালা, প্রশ্নমালার নির্দেশনাবলি, সাক্ষাৎকারের রেকর্ডশিট ও সাক্ষাৎকার গ্রহণের নিয়মাবলি এবং নির্দেশাবলি, সময় এবং খরচ ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে।

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায়, তথ্যের সঠিকতা ও নির্ভরযোগ্যতার মধ্যেই সামাজিক জরিপের কার্যকারিতা নিহিত। তাই তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে উপরের উল্লেখিত ধাপসমূহ অনুসরণ করতে হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url