গবেষণামূলক সমস্যার উৎস
সমস্যা কিভাবে সৃষ্টি হয় তা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। গবেষণামূলক সমস্যার উৎসমূল গবেষণার চিন্তার মধ্যেই নিহিত থাকে। গবেষক নিজেও একজন মানুষ। তাই তার ব্যক্তিগত সমস্যা থাকতেই পারে। গবেষকের সমস্যাই গবেষণামূলক সমস্যা নয়। কেবল গবেষণাকার্যে ব্যবহারের জন্য তার চিন্তার যে সকল সমস্যার জন্ম দেয় তাই হচ্ছে গবেষণামূলক সমস্যা। গবেষক গবেষণামূলক সমস্যার উদ্ভব করলেও এসব সমস্যা তার চিন্তার কতকগুলো উৎসসমূহ থেকে উদ্ভুত।
গবেষণামূলক সমস্যার উৎস
গবেষণামূলক সমস্যা সৃষ্টির উৎসমূল নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. পূর্ববর্তী গবেষণা:
পূর্ববর্তী গবেষণা সমস্যার একটি উৎস। যখন একটি গবেষণা শুরু করে তার কার্যসম্পাদন করা হয় তখন গবেষণার ফলাফলকে ঘিরে একাধিক গবেষণার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এসব সম্ভাবনা সমস্যাকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। এমনিভাবে একটি গবেষণা শেষ করার পর পর্যায়ক্রমে আরও একাধিক গবেষণামূলক সমস্যার উৎপত্তি ঘটে। এসব সমস্যা পূর্ববর্তী গবেষণার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে থাকে।
২. সাহিত্য পর্যালোচনা:
গবেষণায় সমস্যার জন্য সাহিত্য পর্যালোচনাও প্রয়োজন। গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য, সংবাদ, ইতিহাস, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করাকে সাহিত্য পর্যালোচনা বলে। এ সমস্ত গবেষণামূলক সাহিত্য পড়ে ব্যাখ্যা, পর্যালোচনা, আলোচনা ও বিশ্লেষণ করা হয়। বিভিন্ন গবেষণা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার পর নতুন নতুন গবেষণামূলক সমস্যার উদ্ভব ঘটে। তাই গবেষণা সমস্যার ক্ষেত্রে সাহিত্য পর্যালোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. অন্তর্দর্শন:
সমস্যার উৎসমূলে অন্তর্দর্শনেরও ভূমিকা রয়েছে। যে সমস্ত লোক গবেষণা কাজে নিয়োজিত থাকে তাদেরকে প্রথমে সমস্যাটিকে চিহ্নিত করে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে হবে। গবেষকরা যেকোনো কাজে ব্যস্ত থাকুক না কেন তাদের প্রত্যক্ষণে সবসময় গবেষণার বিষয়বস্তু জাগ্রত থাকে। ফলে যেকোনো সময় গবেষণা সংক্রান্ত নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে। নতুন সমস্যার উদ্ভব ঘটে বিধায় এই প্রক্রিয়াকে অন্তর্দর্শন বলে। অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে কেবল সমস্যার উদ্ভবই হয় না; বরং এ সমস্যা সমাধানের উপায়ও পাওয়া যায়। অন্তর্দর্শনের মাধ্যমে যে সমস্যা বা সমাধান পাওয়া যায় সেগুলোকে মনোবিজ্ঞানীরা শিক্ষণের প্রক্রিয়া বলে উল্লেখ করেছেন।
৪. প্রাকৃতিক ঘটনাবলি:
সমস্যার অন্যতম উৎসমূল হলো প্রাকৃতিক ঘটনাবলি। যখন থেকে প্রাকৃতিক ঘটনাবলি পর্যবেক্ষণ করা হয় তখন থেকে গবেষকদের চিন্তাচেতনায় কতগুলো প্রশ্নের আর্বিভাব ঘটে। এই প্রশ্নগুলোই মনোবিজ্ঞানে গবেষণামূলক সমস্যা বলে অভিহিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মেঘলা আকাশে বিদ্যুৎ চমকাবার সময় প্রচন্ড শব্দ হয়। এখানে প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করাই গবেষকদের নিকট সমস্যা বলে বিবেচিত হয়। কোনো আলোর ঝলকানির পরপরই প্রচণ্ডভাবে শব্দ হয়, এমন প্রশ্ন গবেষকদের কাছে ধরা দেয়। এসব প্রশ্নের উত্তর বের করাই একটি সমস্যা। সুতরাং, বিভিন্ন প্রকারের প্রাকৃতিক ঘটনাবলি থেকেই গবেষণামূলক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
৫. যৌক্তিক চিন্তা:
মানুষ সবসময় যেকোনো ব্যাপারেই হোক যুক্তিযুক্তভাবে চিন্তা করতে চায়। সাধারণ মানুষের তুলনায় গবেষকদের মধ্যে এই সমস্ত চিন্তা চেতনা বেশি থাকে। ব্যক্তি যখন যুক্তির সাহায্যে বস্তুজগতের ঘটনাবলিকে বিশ্লেষণ করতে চায় তখন ঘটনাবলির মধ্যে বিভিন্ন রকমের অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। এ সমস্ত অসঙ্গতি যখন বৈজ্ঞানিক ঘটনার সাথে জড়িত হয় তখন গবেষক তাকে গবেষণামূলক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। গবেষণামূলক সমস্যা যুক্তিবাদী মানুষের নিকট খুব সহজেই ধরা পড়ে।
উপসংহার:
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণামূলক সমস্যাগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে উদ্ভব হয়। গবেষকগণ তার নিজের মতো করে সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করে গবেষণার কাজে ব্যবহার করেন। সমস্যা ব্যতীত কোনো গবেষণার কথা ভাবাই যায় না। সমস্যা বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং সমস্যার উৎসের গুরুত্ব গবেষণার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।