সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন সুবিধা ও অসুবিধাসহ

যে নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সমান তাকে সম্ভাবনা নমুনায়ন বলে। এ ধরনের নমুনায়নে সমগ্রকের সকল এককের প্রতিনিধিত্ব থাকে এবং এতে নমুনা ভ্রান্তি কম। সম্ভাবনা নমুনায়নের প্রধান পদ্ধতি হলো সরল দৈবচায়িত নমুনায়ন।

সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন

সম্ভাবনা নমুনায়নের মধ্যে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন। এ পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি এককের নমুনায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সমান থাকে। দৈবচয়নের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করা হয় বলে এ পদ্ধতিতে গবেষকের পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে না। সময়াকের উপাদানসমূহ সমসত্ত্ব হলে এ ধরনের নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়।

সাধারণত সরল দৈবচয়িত নমুনায়নে দু'টি পদ্ধতিতে নমুনা নির্বাচন করা হয়। 

i. লটারি পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতিটি একককে এক একটি নম্বর প্রদান করা হয়। অতঃপর, নম্বরগুলোকে একই আকারে টুকরো কাগজে লিখে একই নিয়মে ভাজ করে মিশিয়ে দিতে হয়। পরবর্তীতে দৈবচয়িত উপায়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক কাগজ তোলা হয়।

ii. দৈব সংখ্যা সারণি পদ্ধতি: দৈবচয়িত বিভিন্ন সারণি যেমন Tippett সারণি, Fisher এবং Yates সারণি ইত্যাদি ব্যবহার করেও নমুনা নির্বাচন করা যায়। এ সারণিতে সংখ্যাগুলো কলাম ও সারণিতে এমনভাবে সজ্জিত থাকে, যাতে যে কোনো সংখ্যা বা এককের নমুনা আসার সম্ভাবনা সমান। সুতরাং, সরল দৈবচয়িত নমুনায়নের নমুনা নির্বাচনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দৈবচয়ন বা Randomness-কে প্রধান ভিত্তি বলে ধরা হয়।

সরল দৈবচয়িত নমুনায়নের সুবিধা: 

সরল দৈবচয়িত নমুনায়নের কতিপয় বিশেষ সুবিধা রয়েছে। নিচে এদের বর্ণনা দেয়া হলো:

১. এ ধরনের নমুনায়ন পদ্ধতিতে নমুনাগুলো সমজাতীয় হওয়ায় তা আকারে ছোট হয়। ফলে অল্প সময়ে ও কম ব্যয়ে নির্ভরযোগ্য গবেষণা করা সম্ভব হয়।

২. এটি নির্বিচারী নমুনায়ন হওয়ায় গবেষণায় নিরপেক্ষতা বজায় থাকে, সে কারণে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কিত গবেষণার ক্ষেত্রে এ নমুনায়ন পদ্ধতিটি সবচেয়ে সহজবোধ্য।

৩. এ নমুনায়ন পদ্ধতিতে গবেষক অতি সহজেই তার পরিমাপের নির্ভুলতা নির্ণয় করতে পারেন। কেননা, নমুনায়নে যদি কোনো ভ্রান্তি থাকে তাও সম্ভাবনার দ্বারা নির্বাচিত।

৪. সরল দৈবচয়িত নমুনায়ন অন্যান্য নমুনায়নের চাইতে অনেক বেশি প্রতিনিধিত্বমূলক। এ ক্ষেত্রে নমুনার পরিধি যত বড় হবে, নমুনায়নের গ্রহণযোগ্যতা তত বৃদ্ধি পাবে।

সরল দৈবচয়িত নমুনায়নের অসুবিধা 

দৈবচয়িত নমুনায়নের যে সকল সীমাবদ্ধতাগুলো বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা নিম্নরূপ:

১. অসমসত্ত্ব সমগ্রকের ক্ষেত্রে এ নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা অসুবিধাজনক। P. V. Young Zvi "Scientific Social Surveys and Research" গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- সমগ্রকের আকৃতি বৃহৎ হলে দৈবচয়িত নমুনায়নের প্রায়োগিক অসুবিধা দেখা দেয়। এ ছাড়া সমগ্রক অসীম হলে তাত্ত্বিকভাবে এ পদ্ধতিটি প্রয়োগযোগ্য নয়। 

২. যেহেতু এ নমুনা প্রতিটি সম্ভাবনা তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তাই নির্বাচিত নমুনা একক হতে তথ্যসংগ্রহ করতে বেশি - অর্থ ও সময়ের প্রয়োজন হয়।

৩. নমুনার আকার বড় না হলে সাধারণত প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা পাওয়া কষ্টকর হয়। অনেক ক্ষেত্রেই উক্ত প্রক্রিয়ায় যেসব নমুনা নির্বাচন করা হয়, তা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকে বলে নমুনার তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে অর্থ ও সময় বেশি লাগে।

৪. দৈব নমুনায়নে অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা নাও পাওয়া যেতে পারে, কেননা অনেক ক্ষেত্রেই একই প্রকৃতির নমুনা অধিক হারে নমুনায়নে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। 

উপসংহার: 

যে নমুনায়ন পদ্ধতিতে সমগ্রকের প্রতি একক স্বাধীনভাবে নমুনায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা সমান তাকে সরল দৈব নমুনায়ন বলে। ইহা সবচেয়ে সহজ ও সরল পদ্ধতি এবং অধিকাংশ নমুনায়ন পদ্ধতি এই পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এই পদ্ধতিতে কোন পক্ষপাতিত্বের সুযোগ থাকে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url