সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্বের মনোসামাজিক কারণ

সমাজ বিরোধী ব্যক্তিত্বকে মনোব্যাধিত ব্যাক্তিত্ব রূপে ও আখ্যায়িত করা হয়। বাল্যকাল থেকেই রোগীর মধ্যে এ রোগের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট হয়ে উঠে এবং ক্রমশঃ তা গুরুতর আকার ধারন করে। রোগীর মধ্যে এরূপ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে যা তার সমাজ জীবনে উপযোজনের ক্ষেত্রে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এরূপ ব্যক্তির মানসিক ক্রিয়া প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে এবং বুদ্ধিবৃত্তি অক্ষুন্ন থাকে। অনেক ক্ষেত্রে বরং এরূপ ব্যক্তি অধিকতর বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হতে দেখা যায়।

সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্বের মনোসামাজিক কারণ: 

অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন যে, সম্পূর্ণ মানসিক কারনেই এই গোলযোগের সৃষ্টি হয়। তারা মনে করেন যে, সুষ্ঠু সামাজিকরনের অভাবে এরূপ রোগীদের স্বাভাবিক মানসিকতা গড়ে উঠতে পারে না। ফলে স্বাভাবিক বুদ্ধি বৃত্তি থাকা সত্ত্বেও এরা এরূপ কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর ও পরিমাণে রোগীর নিজের জন্য ও ক্ষতিকর হয়ে উঠে। সমাজ বিরোধী ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য মনোবিজ্ঞানীরা কয়েকটি বিশেষ মনো সামাজিক কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হল-

১. শৈশব কালে মাতাপিতার স্নেহ প্রীতির থেকে বঞ্চনা এরূপ মানসিকতা গঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কারন। মাতাপিতার ঘনিষ্ঠ ও প্রীতিপূর্ণ সাহায্যের উপর ভিত্তি করেই শিশুর মধ্যে উষ্ণ ব্যক্তি পারস্পারিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রবনতা সৃষ্টি হয়। মাতাপিতার প্রীতি বঞ্চিত শিশুদের মধ্যে সাধারণ দুটি চরম মানসিক প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। প্রথমতঃ এরূপ শিশু পারিপার্শ্বিক মানুষের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন ও আগ্রহহীন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়তঃ এরূপ শিশু পারিপার্শ্বিক মানুষের প্রতি বিদ্বেষপরায়ন ও শক্রমনোভাবাপন্ন হয়ে উঠে। ফলে এদের মধ্যে মানুষের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। এবং পরিমানে এদের মধ্যে চরম আত্মকেন্দ্রিকতা ও স্বার্থপর এবং সমাজ ও সংসারের প্রতি চরম বিতৃষ্ণা ও বিদ্রোহী মনোভাব সৃষ্টি হয়।

২. পারিবারিক পরিবেশে ত্রুটিপূর্ণ আদর্শ অনুসরন ও ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা লাভের জন্য ও শিশুর মধ্যে সমাজ বিরোধী ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হতে পারে। শিশুরা পিতামাতাকেই তাদের আদর্শ রূপে গ্রহণ করে এবং পিতা মাতাকেও তারা অকুষ্ঠভাবে অনুকরন ও অনুসরন করে চলে। মাতাপিতার নিজেদের নৈতিকতা ও মানসিকতা যদি অস্বাভাবিক হয় তাহলে সহজেই তা শিশুদের মধ্যে পরিব্যাপ্ত হয়ে পড়ে।

৩. অনেক পরিবারকে আবার বাহ্যিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত ক্রেতা দুরস্ত ও মার্জিত বলে প্রতীয়মান হয়। সৌজন্য প্রদর্শন ও মার্জিত আচার আচরণের দ্বারা এরা বন্ধু, বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের সহজেই মুগ্ধ করে দেয়। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে অন্যের প্রতি এদের কোন রূপ সম্প্রীতি বোধ থাকে না। প্রকাশ্যে এরা অন্যের প্রতি চরম সৌজন্য প্রকাশ করলেও নিজেদের মধ্যে এরা তাদের সমন্ধে চরম বিতৃষ্ণা ও বিরাপ প্রকাশ করে।

৪. মনোবিজ্ঞানীগণ বহু সংখ্যক সমাজ বিরোধী ব্যক্তিদের জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করে দেখেছেন যে, এক ধরনের বিশেষ পারিবারিক পরিবেশেই এরুপ সমাজ বিরোধী ব্যক্তিত্বের উদ্ভব ঘটে। এরূপ পরিবার দেখা যায় যে, পিতা কর্মজীবনে অসামান্য সাফল্য ও কৃতিত্ব অর্জন করে উচ্চ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী হন এবং সমাজের অত্যন্ত প্রতাপশালী ব্যক্তি হয়ে দাঁড়ান। কর্ম জীবনে তিনি এত ব্যস্ত থাকেন যে, স্বীয় পরিবারের প্রতি তার যথোপযুক্ত মনোযোগের অভাব ঘটে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url