মানসিক স্বাস্থ্য কি?
ব্যক্তির সার্বিক সুস্থতার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসিক অসুস্থতা শারীরিক ব্যাধি সৃষ্টিতে সহায়তাbকরে। ফলে ব্যক্তির স্বভাব-চরিত্রে অস্বভাবী আচরণ প্রকাশ পায়। তাই অস্বভাবী মনোবিজ্ঞানে ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য:
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে আমরা আমাদের ভালো মানসিক অবস্থা, আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা, সমস্যা সমাধান বা মোকাবিলার সক্ষমতা, সামাজিক সম্পর্ক ও জীবন সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতাকে বুঝিয়ে থাকি। আর মানসিক রোগ বা সমস্যা বলতে বোঝায়, ব্যক্তির মনের এমন সংকটাপন্ন অবস্থা, যা তার চিন্তা, অনুভূতি, আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানসিক স্বাস্থ্য বলতে ব্যক্তির এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যখন সে তার পরিবেশের চাহিদা ও পীড়নগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য হলো মানসিক ব্যাধির বিপরীত ধারণা। কোনো ব্যক্তি যদি সমাজ স্বীকৃত উপায়ে তার চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারে, সমাজে কার্যকর এবং উপযোগী ভূমিকা পালন করতে পারে এবং নিজেকে সুখী, সক্ষম ও সফল ব্যক্তি হিসেবে মনে করে তাহলে তাকে মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী বলা যায়।
• মনোবিদ ব্যাংকস ও অন্যরা বলেছেন, 'মানসিক স্বাস্থ্য বলতে ব্যক্তির সেসব আচরণ, মনোভাব ও অনুভূতিকে বোঝায় যেগুলো দ্বারা ব্যক্তির ব্যক্তিগত কর্মক্ষমতা বা কার্যকারিতা, সাফল্য ও সন্তুষ্টির মাত্রা নির্ধারিত হয়।'
• কার্ল মেনিংজারের উদ্ধৃতি দিয়ে কোলম্যান বলেন, 'বাইরের জগতের সঙ্গে এবং সমাজের অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সবচেয়ে কার্যকরভাবে অভিযোজন করা ও সুখীবোধ করার নামই মানসিক স্বাস্থ্য।'
শারীরিক স্বাস্থ্যের ন্যায় মানসিক স্বাস্থ্যও যে গুরুত্বপূর্ণ তা কিছুদিন পূর্বেও কেউ অনুভব করেনি। ১৮৪৩ সালে ড্যানিয়েল নামে এক ব্যক্তি ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিবকে হত্যা করে। আদালতে তার বিচারের সময় বিচারক লক্ষ করলেন যে, ব্যক্তিটি উক্ত অপরাধ সংঘটিত করার সময় মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল। এ কারণে বিচারক উক্ত ব্যক্তিকে শান্তি প্রদানের বিপক্ষে মত দেন। দীর্ঘ বিতর্কের পর বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের নজরে আসে। পরবর্তীকালে এটি একটি আইনে পরিণত হয়।
এভাবে অস্বভাবী মনোবিজ্ঞান সামাজিক বিকাশের সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলন গড়ে তোলে। মানসিক অসুস্থতা শারীরিক ও মানসিক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। এ প্রসঙ্গে ক্লিফোর্ড বিয়ার্স নামক একজন সমাজকর্মীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি দীর্ঘদিন মানসিক হাপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং ১৯০৮ সালে আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। এ গ্রন্থে তিনি নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন মানসিক হাসপাতালের করুণ চিত্র তুলে ধরেন। তার বই হারিয়ে যাওয়া মনকে ফিরে পেলাম (A mind that found itself)-এ মূলত মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ১৯০৯ সালে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সমিতি নামক একটি কল্যাণধর্মী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন যা আজ মানসিক স্বাস্থ্য আন্দোলনের মাইল ফলক হিসেবে কাজ করে।
উপসংহার:
বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এমনকি জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতা বজার রাখার উপর গুরুত্বারোপ করছে। সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে WHO ১৯৯০০ সাল থেকে ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করে আসছে।