গবেষণার সংজ্ঞা: মূল্যায়ন গবেষণার ব্যাখ্যা
গবেষণা পদ্ধতি হচ্ছে এমন কতকগুলো কৌশলগত ব্যবস্থা যা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান বা কোন কার্যের কারণ উদ্ভাবন করা হয়। মানব মনে যেসব বহুমুখী প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে তার যথাযথ উত্তর লাভের আকাঙ্ক্ষায় গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি অবলম্বনে ধারাবাহিকভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে লব্ধ তথ্যসমূহকে যাচাই বাছাই করে নতুন জ্ঞান আহরণ করা ও প্রচলিত জ্ঞানের উন্নতি সাধনই গবেষণার কাজ।
মূল্যায়ন গবেষণা
সামাজিক উন্নয়ন তথা সমাজসেবার জন্য যে কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয় তা কতটুকু কার্যকরী হয়েছ তার ফলাফল জানার জন্য যে বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা পরিচালনা করা হয় তাকে মূল্যায়ন গবেষণা বলে।
প্রফেসর নাজমীর নূর এর মতে,
কোন কর্মসূচিকে কার্যক্রমের কার্যকারিতা, সার্থকতা বা প্রভাব মূল্যায়নের জন্য যে গবেষণা করা হয় তাকে মূল্যায়ন গবেষণা বলে।
K. D. Bailey এর সংজ্ঞানুযায়ী,
মূল্যায়ন গবেষণা নির্ধারণ করে কিভাবে কার্যকরভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
Salauddin Aminuzzaman বলেন,
মূল্যায়ন গবেষণা কোন সংগঠনের নীতি, কর্মসূচি ও প্রকল্পের কার্যক্রম যথাযথ পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। এটা বিজ্ঞান ভিত্তিক পশ্চাৎ কার্যক্রম জানার প্রক্রিয়া যা ভবিষ্যৎ নীতি, প্রকল্প এবং প্যাকেজ কর্মসূচি ভূমিকা পালন করে।
এ গবেষণায় মূলত পরিকল্পনার সাথে বাস্তবায়নের কতটুকু সম্পর্ক রয়েছে এবং বাস্তবায়নের ফলে উপকার পাওয়া গেছে কিনা তার কার্যকারিতা যথাযথভাবে যাচাই করা হয়। কোন কারণে কর্মসূচি ব্যর্থ হলে তার কারণ নির্ণয় এবং সার্থক হলেও এর কারণ উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য গৃহিত কর্ম প্রচেষ্টার ফলাফল পর্যালোচনা করা। এ গবেষণায় সতর্কভাবে উপাত্ত সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয় এবং নিরপেক্ষভাবে গবেষণা কার্য পরিচালনা করা।
প্রবর্তিত কোন কর্মসূচির কার্যকারিতা নির্ণয় করার জন্য যে গবেষণা পরিচালিত হয় তাকে মূল্যায়ন গবেষণা বলে। মূল্যায়ন গবেষণা মূলতঃ কোন কর্মসূচি শুরু করার পর কর্মসূচির প্রভাব, কার্যকারিতা, লক্ষ্যভুক্ত জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রা নির্ধারণ করার জন্য পরিচালিত হয়। এই সম্পর্কে Phillips (1985) বলেছেন, এখানে গবেষক জানতে চান কোন বিশেষ কর্মসূচি প্রত্যাশিত লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে কিনা; গৃহীত পদক্ষেপসমূহের সত্যিকার অর্থে কার্যকারিতা আছে কিনা, এবং এর জন্য অতিরিক্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করার প্রয়োজন আছে কিনা?
মূল্যায়ন গবেষণার ধাপসমূহ
মূল্যায়ন গবেষণা প্রধানতঃ তিন ধাপে হয়ে থাকে। যথাঃ
১) সহগামী মূল্যায়ন:
কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নিরন্তর বা continuous মূল্যায়ন স্বার্থকভাবে পরিচালনার জন্য পরিবীক্ষণ বা Monitoring- এর মাধ্যমে ক্রমাগত নির্দিষ্ট ছকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরবর্তীতে এক মাস বা তিন মাস পরপর এ তথ্য থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করা হয় এবং জুটি বিচ্যুতি দূরীকরণে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেয়া হয়।
২) পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন:
প্রকল্প বাস্তবায়নকালে ধাপে ধাপে, নির্দিষ্ট সময় পর পর বা অর্ধেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর যে ২ মূল্যায়ন করা হয় সেটাকে পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন বলা হয়। এ ধরনের মূল্যায়ন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এ কারণে যে, কোনো প্রকল্পের বা উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি সন্তোষজনক কি না এবং না হলে কি দরকার তার জন্য বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ এ মূল্যায়নের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং সে অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
৩) প্রান্তিক মূল্যায়ন:
কোনো প্রকল্প বা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর তার সফলতা এবং ব্যর্থতা যাচাইয়ের জন্য যে মূল্যায়ন গবেষণা পরিচালনা করা হয় তাকে বলে প্রান্তিক মূল্যায়ন। এ ধরনের গবেষণা আজকাল অপরিহার্য হয়ে পড়েছে বলা যায় এ কারণে যে, আজকাল কোনো কিছুই পরিমাপের বাইরে রাখা হচ্ছে না।
উপসংহার:
আলোচনা পরিশেষে বলা যায় যে. মূল্যায়ন গবেষণা বাস্তব সমস্যা নিয়ে কাজ করে (প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করে)। এটি প্রধানত দুইটি বিষয়ের মূল্যায়ন করে থাকে। যথা- ফলাফলের মূল্যায়ন এবং প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন।