গবেষণা সমস্যা নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ
কোনো না কোনো সমস্যাকে কেন্দ্র করেই বিজ্ঞানের গবেষণা বা আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়। যেকোনো সমস্যাকে ঘিরেই তার সমাধানের চেষ্টা করা হয়। আবার প্রাকৃতিক ঘটনাবলিকে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে তা বৈজ্ঞানিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়। আর এই সমস্যাকে কেন্দ্র করে বিজ্ঞানিগণ অনুসন্ধান কার্য পরিচালনা করে প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেন। কোনো বিষয় বা সত্যতা যাচাইয়ের জন্য পরীক্ষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ কাজ সম্পন্ন করার জন্য পরীক্ষককে কতকগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এসব ধাপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সমস্যা চিহ্নিত করে তার বর্ণনা করা।
সমস্যা নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ
একটি গবেষণার সমস্যা নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় আনতে হয়। নিম্নে সমস্যা নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়সমূহ আলোচনা করা হলো:
১. সংজ্ঞা প্রদান:
গবেষণার সাথে জড়িত যেকোনো সমস্যার যেন সঠিক ও স্পষ্টরূপে সংজ্ঞা প্রদান করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। অর্থাৎ গবেষণার বিষয় কী হবে সে সম্পর্কে স্বল্প পরিসরে হলেও সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা দরকার।
২. প্রায়োগিকতা:
প্রায়োগিকতা সমস্যা নির্বাচনের একটি অন্যতম বিষয়। সমস্যা নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হলো প্রায়োগিক দিক থেকে কোনো তাৎপর্য বহন করে কি না? কোনো গবেষণার ফলাফল যদি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তথ্যের বিকাশ বা উন্নয়নে কোনো সাহায্য করতে না পারে বা ঐ ফলাফল যদি মানবসমাজের কোনো কাজে না আসে তাহলে ঐ গবেষণা একেবারেই নিরর্থক হয়ে পড়ে।
৩. সময় ও অর্থ:
সময় ও অর্থের পরিমাণ নির্ধারণের মাধ্যমেই সমস্যা নির্বাচন করা হয়। কেননা এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচা বিষয়। অর্থাৎ একটি গবেষণাকার্য সম্পাদনের পূর্বে অবশ্যই গবেষককে হিসাব করতে হয় যে, ঐ গবেষণাকর্মটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে আনুমানুকি কত সময় ও অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। কেননা সময় ও অর্থের দিক থেকে গবেষণার সমস্যাটি যদি গবেষকের আয়ত্বের মধ্যে হয় তাহলে তা গবেষণার জন্য উত্তম।
৪. গবেষকের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা:
গবেষকের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থাকে গবেষণার সমস্যা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেননা গবেষণার জন্য এমন হওয়া উচিত, যা একাধারে পরীক্ষণযোগ্য প্রমাণসাপেক্ষ ও যাচাইযোগ্য। এক্ষেত্রে গবেষকের বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থা যদি পরিপক্ব না হয়, তাহলে সঠিক সমস্যা নির্বাচন করা সম্ভব হয় না।
৫. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ:
গবেষণার সমস্যা নির্বাচনে গবেষককে খেয়াল রাখতে হয় যে উক্ত গবেষণার তথ্য সংগ্রহের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব কি না। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে সমস্যাটি নতুনভাবে সনাক্ত করতে হয় যাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
৬. সমস্যার তাৎপর্য:
মানুষের সমস্যার অন্ত নেই। তাই সবসময় নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তবে সব সমস্যাই গবেষণার জন্য নির্বাচন করা যায় না। কেননা সব সমস্যাই গবেষণাযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে যেসব সমস্যার তাৎপর্য সবচেয়ে বেশি, যে সকল সমস্যার সমাধান সমাজের কল্যাণ সাধন করবে সেগুলোকে বিবেচনা করেই সমস্যা নির্বাচন করা হয়।
৭. সময়সূচী:
যেকোনো গবেষণার ক্ষেত্রে সমস্যা নির্বাচনের জন্য প্রথমত যে মৌলিক বিষয়টি মাথায় রাখতে হয় তা হলো সময়সূচী। যেমন-কোনো অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার প্রয়োজন বেশি। এখানে তাদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও চিকিৎসার সমস্যার নির্বাচন করাই সময়োপযোগী সমাধানমূলক কাজ। এই সময় তাদের কর্মসংস্থানের পথ কিভাবে বাড়ানো যায় এই সমস্যাটি নিয়ে কাজ না করলেও চলবে।
৮. গবেষকের ব্যক্তিগত ঝুঁকি:
গবেষক যখন কোনো গবেষণা করতে যান তখন গবেষণার সমস্যা নির্বাচনে গবেষকের ব্যক্তিগত ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য থাকতে হয়। মূলত গবেষণার সমস্যা নির্বাচনের ক্ষেত্রে একাধিক সমস্যার উদ্ভব হয়। আর এসব সমস্যা মোকাবেলা করার সামর্থ্য অবশ্যই গবেষকের থাকা দরকার।
উপসংহার
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণার সমস্যায় গবেষণাটিকে সার্থক করে তুলতে হলে সমস্যা নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি। সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়া হলো অত্যন্ত কঠিন। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে সমস্যা নির্ধারণ করে গবেষণা পরিচালনা করলে গবেষণা সার্থক হবে। সুতরাং মনোবিজ্ঞানে সমস্যা নির্বাচন প্রক্রিয়াটি যদিও অত্যন্ত জটিল তারপরও এদের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।