আচরণ স্বাভাবিকতা ও অস্বাভাবিকতা বলতে কী বুঝায়?
ব্যক্তির আচরণকে স্বভাবী ও অস্বভাবী-এ দুভাগে ভাগ করা হয়। স্বভাবী ও অস্বভাবী আচরণ একটি আপেক্ষিক বিষয়। এরা পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নয়। যেকোনো স্বাভাবিক মানুষ ভয়ভীতি বা হুমকির সম্মুখীন হলে তার আচরণ বদলে যায়। অনেক সময় সাহসের বহিঃপ্রকাশও অস্বভাবী আচরণে পরিণত হতে পারে। যে ব্যক্তি কেবলই অন্যের সাথে ঝগড়া-বিবাদ ও কোন্দলে লিপ্ত হয় সে অসুখী ও অস্বাভাবিক।
আচরণের স্বাভাবিকতা:
বাস্তবভিত্তিক আচরণকেই স্বাভাবিকতা বা স্বভাবী আচরণ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষের যথোপযুক্ত আচরণ সম্পাদনই হলো আচরণের স্বাভাবিকতা বা স্বাভাবিক আচরণ। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, স্বাভাবিক আচরণ ব্যক্তিকে তার জৈবিক ও সামাজিক প্রেষণাগুলো চরিতার্থ করে পরিবেশের সাথে সংগতি স্থাপন করে চলতে সাহায্য করে। স্বভাবী ব্যক্তি নিজেকে দল পরিত্যক্ত মনে করে না এবং কোনোরূপ হীনম্মন্যতায় ভোগে না। স্বভাবী ব্যক্তি বাস্তবের সাথে কার্যকর সংযোগ বজায় রাখতে সমর্থ হয়। স্বাভাবিক আচরণসম্পন্ন ব্যক্তিদের ব্যক্তিত্বের সুষ্ঠু সমন্বয় থাকে এবং তাতে সুসামঞ্জস্য থাকে। স্বভাবী ব্যক্তিরা নিজের ও সমাজের জন্য নিরাপদ হয়। এদের মধ্যে অলীক ও ভ্রান্ত প্রত্যক্ষণ থাকে না এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকে। স্বভাবী ব্যক্তির যৌনাকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক ও পরিমিত। এরা স্বাভাবিক যৌনাচারে তৃপ্তি পায়। সর্বোপরি স্বভাবী আচরণ সমাজ ও ব্যক্তির মঙ্গল সাধন করে।
আচরণের অস্বাভাবিকতা:
যেসব সকল আচরণ স্বভাবী আচরণ থেকে আলাদা তাকে অস্বভাবী আচরণ বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, অস্বভাবী আচরণ হলো সেই আচরণ যা ব্যক্তি বা দলের জন্য মঙ্গলজনক বা হিতকর নয়। আবার অনেকের মতে, সমাজ প্রত্যাশিত আচরণের যে প্রচলিত নৈতিক মান তা থেকে ভিন্নতর আচরণকে অস্বভাবী আচরণ হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়। লৌকিক ব্যাখ্যায় যেসব আচরণ সাধারণ মানুষের আচরণ থেকে দর্শনীয়ভাবে পৃথক সেগুলো হলো অস্বভাবী আচরণ। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা স্বভাবী আচরণের একটি মানদণ্ড ঠিক করে নিয়ে থাকি এবং সে মানদণ্ডের সাথে তুলনা করে যে আচরণগুলোকে পৃথক মনে করি সেগুলোকেই আমরা অস্বভাবী আচরণ বলে থাকি।
অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে আমরা সচরাচর বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক পড়ে যা বুঝে থাকি সেগুলো থেকে অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে ভীতিজনক ধারণা জন্মায়। কারণ, অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা অবৈজ্ঞানিক বর্ণনা এবং অদ্ভুত আচরণের দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তাই মনোবিজ্ঞানীরা কোলম্যান অস্বাভাবিক আচরণের বেশ কয়েকটি মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন; যেমন- পরিসংখ্যানমূলক মানদণ্ড, ব্যক্তিগত সংগতিবিধানের মানদণ্ড, ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ের মানদণ্ড, ব্যক্তিগত সুপরিণতি বা পূর্ণ বিকাশ এবং দলগত মঙ্গল ও অগ্রগতির মানদণ্ড। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোলম্যান অস্বভাবী আচরণ সম্পর্কে বলেন, অস্বভাবী আচরণ মাত্রই কোনো না কোনো প্রকার সংগতিবিধানের অভাব থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে।
উপসংহার:
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, স্বভাবী ও অস্বভাবী আচরণ একটি আপেক্ষিক বিষয়। এরা পরস্পর থেকে আলাদা না-হলেও এ দুটি বিষয় সম্পর্কে মৌলিক ধারণাগত পার্থক্য রয়েছে; যেমন- ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ কর্তৃক প্রত্যাশিত আচরণ হলো স্বভাবী আচরণ। আর প্রত্যাশিত নয় যা বা যা কামনা করা হয় না এরূপ আচরণ হলো অস্বভাবী আচরণ। তবে সাধারণ মানুষ, মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বভাবী আচরণের ধারণা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে।