অস্বভাবী আচরণ কি?

ব্যক্তির আচরণকে স্বভাবী ও অস্বভাবী-এ দুভাগে ভাগ করা হয়। স্বভাবী ও অস্বভাবী আচরণ একটি আপেক্ষিক বিষয়। এরা পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নয়। যেকোনো স্বাভাবিক মানুষ ভয়ভীতি বা হুমকির সম্মুখীন হলে তার আচরণ বদলে যায়। অনেক সময় সাহসের বহিঃপ্রকাশও অস্বভাবী আচরণে পরিণত হতে পারে। নিম্নে অস্বভাবী আচরণ বর্ণনা করা হলো-

অস্বভাবী আচরণের ধারণা: 

'অস্বভাবী' শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো 'Abnormal'. শাব্দিক অর্থে 'Abnormal' শব্দটিকে দুভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে; যথা- 'Ab' এবং 'Normal'. 'Ab' শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো 'Away' বা দূরে এবং 'Normal' শব্দের অর্থ হলো স্বভাবী বা অস্বাভাবিক। সুতরাং আভিধানিক অর্থে 'Abnormal' শব্দটির অর্থ হলো 'away from the normal' অর্থাৎ স্বভাব-বহির্ভূত বা অস্বভাবী। শাব্দিক অর্থে মানুষের স্বভাব-বহির্ভূত আচরণই অস্বভাবী আচরণ। শাব্দিক অর্থে মানুষের স্বভাব-বহির্ভূত আচরণই অস্বভাবী আচরণ।

যে সকল আচরণ স্বভাবী আচরণ থেকে আলাদা তাকে অস্বভাবী আচরণ বলা হয়। অন্যভাবে বলা যায়, অস্বভাবী আচরণ হলো সেই আচরণ যা ব্যক্তি বা দলের জন্য মঙ্গলজনক বা হিতকর নয়। আবার অনেকের মতে, সমাজ প্রত্যাশিত আচরণের যে প্রচলিত নৈতিক মান তা থেকে ভিন্নতর আচরণকে অস্বভাবী আচরণ হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়। লৌকিক ব্যাখ্যায় যেসব আচরণ সাধারণ মানুষের আচরণ থেকে দর্শনীয়ভাবে পৃথক সেগুলো হলো অস্বভাবী আচরণ। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা স্বভাবী আচরণের একটি মানদণ্ড ঠিক করে নিয়ে থাকি এবং সে মানদণ্ডের সাথে তুলনা করে যে আচরণগুলোকে পৃথক মনে করি সেগুলোকেই আমরা অস্বভাবী আচরণ বলে থাকি।

অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে আমরা সচরাচর বিভিন্ন ধরনের বই-পুস্তক পড়ে যা বুঝে থাকি সেগুলো থেকে অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে ভীতিজনক ধারণা জন্মায়। কারণ, অস্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা অবৈজ্ঞানিক বর্ণনা এবং অদ্ভুত আচরণের দৃষ্টান্তের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। তাই মনোবিজ্ঞানীরা কোলম্যান অস্বাভাবিক আচরণের বেশ কয়েকটি মানদণ্ডের কথা উল্লেখ করেছেন; যেমন- পরিসংখ্যানমূলক মানদণ্ড, ব্যক্তিগত সংগতিবিধানের মানদণ্ড, ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ের মানদণ্ড, ব্যক্তিগত সুপরিণতি বা পূর্ণ বিকাশ এবং দলগত মঙ্গল ও অগ্রগতির মানদণ্ড। এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে কোলম্যান অস্বভাবী আচরণ সম্পর্কে বলেন, অস্বভাবী আচরণ মাত্রই কোনো না কোনো প্রকার সংগতিবিধানের অভাব থেকে সৃষ্টি হয়ে থাকে। 

উপসংহার: 

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, অস্বভাবী আচরণ একটি আপেক্ষিক বিষয়। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ- কর্তৃক প্রত্যাশিত আচরণ হলো স্বভাবী আচরণ। আর প্রত্যাশিত নয় যা বা যা কামনা করা হয় না এরূপ আচরণ হলো অস্বভাবী আচরণ। তবে সাধারণ মানুষ, মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মধ্যে স্বভাবী আচরণের ধারণা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url