অহেতুক ভয় অথবা আতঙ্কমূলক প্রতিক্রিয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
ভীতি বা ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়ায় রোগী কোনো একটি বস্তু বা ঘটনাকে অহেতুক হলেও ভীষণভাবে ভয় পায়। যে বস্তু বা ঘটনাকে রোগী ভয় পাচ্ছে, তাকে ভয় করার কিছুই নেই। অথচ রোগী সে বস্তু বা ঘটনার নাম শুনলে শিউরে ওঠে এবং তার কাছাকাছিও ঘেঁষতে চায় না। যদিও সেই বস্তু বা ঘটনাকে ভয় করার কোনো কারণ নেই, তবে বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, অতীতে এরূপ বস্তু বা ঘটনা ভয়ের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে।
অহেতুক ভয়:
গ্রিক শব্দ 'Phobos' থেকে ইংরেজি 'Phobic' শব্দের উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ আতঙ্ক বা অহেতুক ভয়। অহেতুক ভয় বলতে এক ধরনের আচরণমূলক গোলযোগকে বোঝায়। অন্যভাবে বলা যায়, যে ভীতি মানুষের চেতন বা অবচেতন মনে তীব্র মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার সৃষ্টি করে তাই আতঙ্ক বা অহেতুক ভয়। এটি এক ধরনের স্নায়বিক রোগ।
অনেক নিউরোটিক রোগী কোনো একটি বস্তু বা ঘটনাকে অমূলকভাবেই বেশি ভয় পায়। এই ভীতি এতই প্রবল যে রোগা প্রাণপণে উক্ত অবস্থা থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। রোগী নিজে অনেক সময় তার ভয়ের অযৌক্তিকতা সম্বন্ধে বুঝতে পারে, কিন্তু তবুও সে উক্ত অবস্থাটিকে ভয় না করে পারে না। কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা ঘটনার প্রতি যদি ব্যক্তির মনে অহেতুক ভয় দেখা দেয়, তাহলে তাকে অহেতুক ভীতি বা ফোবিয়া (Phobia) বলে। পরিবেশের যেকোনো কল্পিত দিককে কেন্দ্র করে ব্যক্তির মনে ফোবিয়া দেখা দিতে পারে।
অহেতুক ভীতির লক্ষণ:
অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়ার রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। নিম্নে অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি/ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়ার লক্ষণসমূহ আলোচনা করা হলো:
১. বিভিন্ন পরিবেশের প্রতি ভীতি: অনেক সময় রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন পরিবেশ সম্পর্কে অজানা ভীতি লক্ষ করা যায়। তাই এসব ভীতিজনক পরিবেশ থেকে রোগী সব সময় দূরে থাকতে চায়; যেমন- কোনো কোনো ব্যক্তি খোলা জায়গা দেখে ভয় পায় তাই সে ঘরের বাইরে যেতে চায় না। আবার কোনো ব্যক্তি বদ্ধ ঘরে থাকতে ভয় পায়। যার জন্য বদ্ধ ঘরে থাকতে চায় না। এছাড়াও এসব রোগী জীবজন্তুর রক্ত, পানি, আলো, বাতাস দেখেও ভয় পেয়ে থাকে।
২. উৎসাহ ও উদ্দীপনা হ্রাস পাওয়া: উৎসাহ-উদ্দীপনা মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। তথাপি এগুলো যখন হ্রাস পায় তখন মানুষের মনে ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়; অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তি যখন বিভিন্ন অবস্থায় কোনো বিষয়ের প্রতি অযৌক্তিক ভয় পায় তখন সে দৈনন্দিন কাজকর্ম, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলে।
৩. দৈহিক দুর্বলতা: অমূলক ভীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দৈহিক দুর্বলতার লক্ষণ প্রকাশ পায়; যেমন- মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, পেটব্যথা, পেটের গোলযোগ, শরীর ঝিমঝিম প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়। এগুলো থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে, কোনো ব্যক্তির অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি ঘটেছে।
৪. মানসিক দুর্বলতা: কোনো মানুষ যখন ভয় পায় তখন স্বভাবতই সে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার মধ্যে অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি দেখা দেয়। এসব রোগী যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে। অমূলক ভীতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দেখে ভয় পেয়ে খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দেয় এবং সারাদিন গভীর চিন্তায় মগ্ন থাকে।
৫. সাধারণ আতঙ্ক থেকে পৃথক: অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি বা আতঙ্কজনিত প্রতিক্রিয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো এটি সাধারণ আতঙ্ক থেকে পৃথক। সাধারণ আতঙ্ক থেকে এর মাত্রা বেশি। অনুকরণমূলক শিক্ষণের মাধ্যমে অনেক সময় এ ধরনের ভীতির উদ্ভব হতে পারে।
৬. তীব্র মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা: অমূলক ভীতিজনিত বিকৃতি বা ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়া একটি মারাত্মক মানসিক রোগ। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে তীব্র মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা দেখা দেয়। এরূপ আতঙ্কের এক পর্যায়ে ব্যক্তি মূর্ছাও যেতে পারে।
অহেতুক ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়ার কারণসমূহ
অহেতুক ভীতিমূলক প্রতিক্রিয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ:
১. মনোসমীক্ষণমূলক তত্ত্ব:
অবদমিত কামনার দ্বারা সৃষ্ট উদ্বেগের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার উপায় হিসেবে অমূলকভীতি দেখা দিতে পারে। উদ্বেগ অথবা ভীতিজনক অপদিম জৈবিক তাড়না (Id impulse) যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে তা স্থানচ্যুত হয়ে একটি বস্তু বা পরিস্থিতির উপরে স্থানান্তরিক হয় যে বস্তুর সাথে উক্ত কামনার প্রতিকধর্মী সম্পর্ক রয়েছে। এসব বস্তু যেমন লিফট বা বন্ধঘর, পরবর্তীকালে অমূলক কীর্তি সৃষ্টি করে। এসব পরিস্থিতির প্রতি ভীতি সৃষ্টি করে ব্যক্তি তার সচেতন মনে লুকায়িত দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। অমূলক ভীতি হলো একটি বাস্তব সমস্যার সম্মুখীন হওয়া থেকে দূরে থাকার একটি আত্মরক্ষামূলক কৌশল।
আরেকটি মনোসমীক্ষণ তত্ত্বে এরিয়েটি বলেছেন যে, অমূলক ভীতি আদিম কামনার অবদমনের ফলে সৃষ্টি হয় না বরং এটা শৈশবের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কের কোনো সমস্যাকে অবদমন করার ফলে সৃষ্টি হয়। এরিয়েটি বলেছেন যে, আজকে যারা অমূলক ভীতিতে ভুগছে শৈশবে তারা যখন নিষ্পাপ ও সরল ছিল তখন তারা তাদের আশপাশের সবাইকে বিশ্বাস করত যে তারা বিপদ থেকে তাদের রক্ষা করবে কিন্তু পরে তারা বয়স্ক লোকদের ভয় পেতে শুরু করে। বিশেষ করে তারা পিতামাতাকে ভয় করে। কারণ তারা নির্ভরযোগ্যভাবে আচরণ করেনি। তারপর ব্যক্তির পরিণত বয়সে যখন পীড়ন সৃষ্টি হয় তখনই অবদমিত ভীতিটি বাইরে বেরিয়ে অমূলক ভীতির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে।
২. আচরণবাদী তত্ত্ব:
আচরণবাদী মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অন্যান্য সব আচরণের মতোই অমূলকভীতি একধরনের শিক্ষণের ফল বা সাপেক্ষণের ফল (Conditioning)। তবে ঠিক কোন ধরনের শিক্ষণ-প্রক্রিয়া অমূলকভীতির প্রতিক্রিয়াগুলো সৃষ্টির জন্য দায়ী সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এ বিষয়ে অন্তত তিনটি মতপার্থক্য বিবেচনা করা উচিত:
- পরিহারমূলক সাপেক্ষণ মডেল (Avoidance conditioning model)
- অনুকরণমূলক শিক্ষা (Modeling)
- করণ সাপেক্ষণ (Operant conditioning)
পরিহারমূলক সাপেক্ষণ মডেল: এই মডেল অনুসারে একটি আপাত নিরপেক্ষ বস্তুকে একটি স্বাভাবিক ভীতি সৃষ্টিকারী উদ্দীপকের সাথে একত্রে উপস্থিত করলে নিরপেক্ষ বস্তুটিও তা উৎপন্ন করবে। এ প্রসঙ্গে ওয়াটসন ও রায়েনার একটি গবেষণা উল্লেখ্য, উক্ত গবেষণার ১১ মাসের শিশু এলকাট কীভাবে একটি খরগোশ এবং অন্যান্য কানা বস্তুকে ভয় পেতে শেখে তা পরীক্ষণের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। এলবার্ট প্রথমে খরগোশকে ভয় পেত না। কিন্তু উচ্চ শব্দকে ভয় পেত। উচ্চ শব্দটি ভয়ের একটি স্বাভাবিক উদ্দীপক। খরগোশ একটি সাপেক্ষ উদ্দীপক। এখন প্রতিকার খরগোশ দেখানোর সাথে সাথে বা একটু পর যদি উচ্চ শব্দ করা হয় তাহলে খুব অল্প দিনের মধ্যেই শিশুটি শুধু খরগোশ দেখলেই ভীতিজনক প্রতিক্রিয়া করতে শুরু করে। এই ভীতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শিশুটি কি বিভিন্ন বর্জনমূলক প্রতিক্রিয়া শেখে। পরিহার মূলক শিক্ষণের উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি মোটর দুর্ঘটনার পর এক জনের মোটরগাড়ির প্রতি ভীতি হতে পারে।
অনুকরণমূলক শিক্ষণ (Modeling): mincka and others (1984): যে পরীক্ষণ করেছিলেন তা থেকে দেখা যায় যে, ব্যক্তি বা প্রাণী অন্যকে অনুকরণ করে কোনো বস্তু বা উদ্দীপকের প্রতি অমূলক ভীতি আয়ত্ত করতে পারে। তারা দেখেছিলেন যে, বানরের বাচ্চারা তাদের মায়েদের একটি সাপকে ভয় পেতে দেখে নিজেরা সাপকে ভয় পেতে শিখেছিল। এমনকি ঐ বাচ্চারা খেলনা সাপকেও ভয় পেতে শিখেছিল।
করণ সাপেক্ষণ (Operant conditioning): ছোটোবেলায় কোনো তীব্র সাপেক্ষীকরণ অভিজ্ঞতা থেকে অহেতুক ভীতি সৃষ্টি হতে পারে। কোনো শিশুকে যদি ছোটোবেলায় কুকুরে কামড়ায় তাহলে পরবর্তী জীবনেও তার মনে কুকুরের প্রতি একটা ভয় থেকে যেতে পারে। কোনো বাবা-মা যদি তেলাপোকা দেখলে ভয় পান তাহলে তাদের সন্তানরাও সেটা দেখে ভয় পেতে পারে।
৩. জ্ঞানীয় তত্ত্ব:
যারা একটি ঘটনার শুধু খারাপ দিকই বেশি দেখে এবং যারা মনে করে ভবিষ্যতে ভালো ঘটনা বা ভালো ফলাফল না ঘটার সম্ভাবনাই বেশি, তারাই অমূলক ভীতির শিকার হয়। ডেভিসন ও জিগহেলকেহিম তাদের গবেষণার মাধ্যমে উক্ত মতামত সমর্থন করেছেন। অনেকে মনে করেন, অমূলক ভীতির উৎসগুলো মনের অবচেতন স্তরে থাকে। সেজন্য এগুলো সম্বন্ধে সচেতন মন চিন্তা করার জন্য তথ্য পায় না বলে উক্ত বস্তুর ভীতিটাকে অযৌক্তিক বলে তার নিজের কাছেই মনে হয়।
অমূলক ভীতির চিকিৎসা
অমূলক ভীতির চিকিৎসার পদ্ধতিসমূহ নিন্মরূপ:
১. মনোসমীক্ষন পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা:
এ ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতিতে নিম্নলিখিত কৌশলগুলো অবলম্বন করা হয়:
- অবচেতন দ্বন্দ্বগুলো আবিষ্কারকরণ ও উন্মোচিতকরণ (Uncovering the unconscious conflicts): অনেকে মনে করেন ব্যক্তিকে সরাসরি ভীতিজনিত কটনমূলক প্রতিক্রিয়া কমাতে চেষ্টা করতে দেয়ায় বিপদ হতে পারে। কারণ এসব অমূলক ভীতির মাধ্যমে ব্যক্তি নিজেকে অবদমিত দ্বন্দ্বের পীড়ন থেকে রক্ষা করে। সেজন্য ব্যক্তির অবদমিত দ্বন্দ্বগুলোর উন্মোচন করা উচিত। এ উদ্দেশ্যে মুক্ত অনুষঙ্গ পদ্ধতি, স্বর বিশ্লেষণ, স্মৃতিচারণ ইত্যাদি কৌশল অবলম্বন করা হয়।
- এরিয়েটির পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হলে ব্যক্তিকে সমাজের অন্যান্যদের সাধারণীকৃত উদ্বেগজনক প্রতিক্রিয়া বা ভীতিগুলোকে পরীক্ষা/পর্যালোচনা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়।
- আধুনিক কালের মনোসমীক্ষকগণ বিশেষত যাদের অহংতত্ত্বের সমর্থক (Ego psychologist) বলা হয়, তাদের মতে ব্যক্তির অতীত ইতিহাস সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টির উন্মেষ ঘটানোর চেয়ে বরং ব্যক্তিকে ভীতিমূলক পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে উৎসাহ দেওয়া উচিত। আলেকজান্ডার ও ফ্রেঞ্জ মনে করেন, রোগীদের সংশোধনমূলক আবেগীয় অভিজ্ঞতার সুযোগ দেওয়া উচিত। ওয়াচটেল আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে আচরণ চিকিৎসার কৌশল যেমন প্রণালি বন্ধভাবে সংবেদনশীলতা হ্রাসকরণ প্রয়োগের মাধ্যমে অমূলকভীতির চিকিৎসা করতে বলেন।
২. আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি:
আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারীরা নিম্নলিখিত কৌশলগুলোর মাধ্যমে অমূলকভীতির চিকিৎসা করেন:
- প্রণালি বন্ধভাবে সংবেদনশীলতা হ্রাসকরণ (systematic Desensitization): এই পদ্ধতিতে ব্যক্তিকে প্রখনের উপদেশ দেওয়া হয়। শ্লথনের অবস্থায় তাকে ক্রমশ কম ভয় সৃষ্টিকারী উদ্দীপক থেকে শুরু করে বেশি ভয় সৃষ্টিকারী উদ্দীপকসমূহ কল্পনা করতে বলা হয়। তারপর ক্রমশ তাকে বাস্তব উদ্দীপকের সম্মুখীন করা হয় এবং সে এসব উদ্দীপককে সহজে গ্রহণ করতে শেখে।
- সামাজিক পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার কৌশল অর্জন করা: অনেক আচরণমূলক চিকিৎসক রোগীদের ভূমিকা পালন এবং বিহার্সেনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে কীভাবে অন্যের সাথে প্রতিক্রিয়া করতে হবে তা শিখিয়ে দেন। এতে তাদের অমূলকভীতি হ্রাস পায়।
- মডেল বা অনুকরণের মাধ্যমে শিক্ষণ: যে সাপ দেখে ভয় পায়, চিকিৎসক নিজে সাপ ধরে তাকে দেখিয়ে দিতে পারেন এবং সাপুদের দ্বারা এই ভয় দূর করতে পারেন।
- ফ্লাডিং (Flooding): ইংরেজি ফ্লাড (Flood) অর্থ বন্যা। এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করতে হলে, ব্যক্তিকে ভয়ের উৎসের সম্মুখীন করা হয় যাতে ব্যক্তি সর্বোচ্চ মাত্রায় ভয় বা উদ্বেগ প্রকাশ করে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে রোগীর যে পরিমাণে কষ্ট ও যাতনা ভোগ করতে হয় সেদিকে লক্ষ করে অনেকেই এ পদ্ধতি প্রয়োগের বিরোধিতা করেছেন।
- করণশিক্ষণ-পদ্ধতির প্রয়োগ (oparant conditioning): ব্যক্তিকে ক্রমশ ভয়ের উৎসের প্রতি সহজে প্রতিক্রিয়া করার অভ্যাস করানো হয়। প্রথমে বস্তুটির একটি ছবি দেখানো যায় এবং সেটা যখন ধরে বা সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করে তখন পুরষ্কৃত করা হয়, তারপর ভয়ের বস্তুটির কাছে গেলে পুরস্কৃত করা হয়, এভাবে ক্রমশ ভয়ের বস্তুটিকে ধরতে বা এটিকে সরাসরি মোকাবেলা করতে শেখানো হয়।
৩. জ্ঞানীয় দৃষ্টিভঙ্গি:
জ্ঞানীর দৃষ্টিভঙ্গির সমর্থকগণ মনে করেন ভীতির উৎস/কারণ সম্পর্কে ব্যক্তির জ্ঞান ও বিশ্বাস পরিবর্তন করতে চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু অনেকেই বলেন শুধু জ্ঞান বা বিশ্বাসের পরিবর্তন করা হলেই ভয় দূরীভূত হয় না। সাথে সাথে ব্যক্তিকে ভয়ের উৎসের সম্মুখীন করানো উচিত এবং আচরণমূলক চিকিৎসা-পদ্ধতি সমূহের প্রয়োগ করা উচিত। তবে সামাজিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে জ্ঞানীয় চিকিৎসা-পদ্ধতি এবং সামাজিক কৌশল প্রশিক্ষণের যৌথ প্রয়োগে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে।
৪. জৈবিক দৃষ্টিভঙ্গি:
ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা: ঔষধ উদ্বেগের প্রশমন ঘটায় সেগুলোকে নিদ্রাকারক যেসব (sedatives) প্রশান্তিকর (tranguilizors) অথবা উদ্বেগনাশক (anxiolytics) ঔষধ বলা হয়। ১৯৫০ সালের দিকে উদ্বেগনাশক দুটি ঔষধ আবিষ্কৃত হয়।
- প্রোপেনডিয়ল (Propandiols) যেমন: মিলটাউন (Miltown)
- বেনজোডায়াজাপাইনস (Benpodeczapines) যেমন: জালিয়াম (vallium), জানাক্স (Zanax)
এগুলো এখনও যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
উপসংহার:
সর্বশেষে বলা যায়, ভয়কে এড়িয়ে না-চলে মোকাবিলা করাই সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা-পদ্ধতি। ডেভিসন ও অন্যান্য একটি চীনা প্রবাদ উদ্ধৃত করে বলেছেন যে,
Go straight into the heart of danger, for there you will find safety.
অর্থাৎ - বিপদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করো, কারণ সেখানেই তুমি নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবে।