স্বপ্নচারিতা
স্বপ্নচারিতা (Somnambulism)
বিচ্ছিন্নতামূলক নিউরোসিসের আর একটি ধরন হলো স্বপ্নচারিতা। এ রোগে রোগী ঘুমন্ত অবস্থায় সমাজবিরোধী ও সমাজ অননুমোদিত অচেতনের আবেগকে বাহ্যিক আচরণে প্রকাশ করে থাকে। রোগীর অনেক মানসিক দ্বন্দ্ব ও ধারণা যেগুলি সে জাগ্রত অবস্থায় তার সচেতন মন থেকে সরিয়ে রাখে- সেগুলো স্বপ্নের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে। এ রোগ রাতে এবং অনিয়মিতভাবে ঘটে। এ রোগের প্রকোপ কিশোরদের মধ্যে বেশি তবে শৈশবে বা প্রাপ্তবয়স্কেও এ রোগ হতে পারে। Janness & Jorgensen (1941) এক সমীক্ষায় দেখেন, কলেজে নতুন ভর্তি ১৮০৮ জন ছাত্রের শতকরা ৫ জনের স্বপ্নচারিতা রোগ আছে। এ রোগ মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বেশি হয়।
স্বপ্নচারিতার লক্ষণসমূহ
স্বপ্নচারিতার লক্ষণ হলো- এক জন রোগী স্বাভাবিকভাবেই ঘুমাতে যায়, কিন্তু নিদ্রার মাঝে হঠাৎ উঠে কোনো কাজ করে; যেমন, হয়ত অন্য ঘরে বা রাস্তায় চলে গিয়ে কোনো একটা বেশ অদ্ভূত কাজ করে বসে, তারপর আবার বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে রোগী তার রাতের ঐসব কাজের কথা কিছুই মনে করতে পারে না। স্যান্ডলার স্মৃতিভ্রংশের মতো স্বপ্নচারিতাকেও এক ধরনের প্রতীকধর্মী পলায়ন বলে উল্লেখ করেছেন।
স্বপ্নচারিতার কারণসমূহ
মনোবিজ্ঞানী ক্যাসেন এবং ম্যান্ডলার বলেন যে, উদ্বেগ ও পীড়ন থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তির এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। স্বপ্ন বা দিবাস্বপ্নের চেয়ে এই রোগে ব্যক্তির গতীয় সঞ্চালন বেশি হয়ে থাকে।
কৈশোরে যৌনতার দ্বন্দ্ব, নির্ভরশীল ও আত্মনির্ভরশীলতার দ্বন্দ্ব এবং জীবনের অন্যান্য সমস্যার জন্য এ রোগ দেখা দেয়। প্রাপ্তবয়স্কে এই রোগ হওয়ার কারণ হলো ব্যক্তি তার দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ যথাযথভাবে করতে পারে না। তাছাড়া পারিবারিক ও সামাজিক পীড়নের জন্যও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।