বিবর্তনবাদের সীমাবদ্ধতা (সমালোচনা)
বিবর্তনবাদে পরিবৃত্তির যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে আলোচনা করা হলেও এর উদ্ভব সম্পর্কে যথেষ্ট প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপন করা হয়নি। প্রাকৃতিক নির্বাচন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীবের বিভিন্ন বিলুপ্ত অঙ্গের ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। পরজীবীদের অঙ্গ সম্পূর্ণভাবে কেন গঠিত হয় না, বিবর্তনবাদের মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করা যায় না। অর্জিত গুণাবলি বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হয়, ডারউইনের এই অভিমত সঠিক নয়।
ডারউইনের মতবাদ অনুসারে মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল নিম্ন শ্রেণীর প্রাণী। বেঁচে থাকার তাগিদে প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে মানুষ বর্তমান রূপ লাভ করেছে। অতএব মানুষ তার সকল স্বভাব উত্তরাধিকার সূত্রে তার পুর্বপুরুষ প্রাণীর কাছ থেকে লাভ করেছে। একারণে মানুষ ও ইতর প্রাণীর আবেগ, অনুভূতি ও আচরণের মধ্যে অনেক সামঞ্জস্য পরিলক্ষিত হয়।
এই মতবাদের ফলে মানুষের চেতন প্রক্রিয়ার জৈবিক ভিত্তি রচিত হয় এবং মানুষের আচার আচরণ বুঝবার জন্য প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এর ফলে 'তুলনামূলক মনোবিজ্ঞান' নামে একটি নতুন শাখার উদ্ভব ঘটে। প্রাণীদের আচরণ নিয়ে গবেষণার ফলে মনোবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসাবে মনের পরিবর্তে আচরণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা শুরু হয়। এ কারণে ডারউইনকে আচরণের পূর্বসূরি হিসাবে গণ্য করা হয়।
বিখ্যাত বৃটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস গ্যাল্টন একটি গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, মানুষের দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যবলীর উপর বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব রয়েছে।
যেহেতু মানুষের পক্ষে বংশগতি নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ, সেহেতু মানুষের বৈশিষ্ট্যবলীর উতকর্ষ সাধনের জন্য তিনি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং পরিবেশের সাথে খাপখাওয়ানোর জন্য মানুষের সঠিক কার্যকলাপের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বংশগতির প্রভাব সম্বন্ধে গবেষণা করে গ্যল্টন প্রমাণ করেন যে, কোনো জাতির নতুন প্রজন্মের দৈহিক উচ্চতা সেই জাতির গড় উচ্চতার দিকে প্রত্যাবর্তিত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। শুধু দৈহিক নয়, বরং মানসিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও তিনি একই প্রবণতা লক্ষ্য করেন।
বংশগতির মাধ্যমে জীবের মধ্যে নতুন বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়, ফলে জীবের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, যা ডারউইনের বিবর্তনবাদ সমর্থন করে।
বিবর্তন মতবাদের অনেক ভুল ক্রুটি থাকা সত্ত্বেও ডারউইনের এই মতবাদ জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং বিবর্তনবাদ দ্বারা মনোবিজ্ঞানীদের চিন্তাধারা গভীরভাবে প্রভাবিত। এছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা ক্ষেত্রেও ডারউনের বিবর্তনবাদ অনুসরণ করা হয়ে থাকে।