সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্ব

সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্ব

সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্বকে মনোব্যাধিত ব্যক্তিত্ব রূপেও আখ্যায়িত করা হয়। বাল্যকাল থেকেই রোগীর মধ্যে এ রোগের বৈশিষ্ট্য পরিস্ফুট হয়ে ওঠে এবং ক্রমশ তা গুরুতর আকার ধারণ করে। রোগীর মধ্যে এরূপ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে, যা তার সমাজজীবনে উপযোজনের ক্ষেত্রে চরম বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নৈতিকতা রোধের অভাবই তাদের এরূপ অপসংস্কৃতিমূলক আচরণের মূল কারণ।

সমাজবিরোধী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য 

নীতিবোধের অভাবই এরূপ ব্যক্তিত্বের মূল লক্ষ্য। এদের যথেষ্ট বুদ্ধি থাকা সত্ত্বেও এরা কোনো সময় ন্যায়-অন্যায় বিচার-বিবেচনা করার তাগিদ বোধ করে না। ফলে এরা এরূপ আচরণে লিপ্ত হয় যা সমাজ, পরিবার ও অন্যদের জন্য ক্ষতিকারক হয়ে পড়ে এবং পরিণামে নিজেদের জন্যও তা অকল্যাণকর হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে নিম্নোক্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয় যা এদের মধ্যে নীতিবর্জিত কার্যকলাপের উৎপত্তি ঘটায়।

১. এরা অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়। নিজের সামান্যতম স্বার্থের জন্য এরা নিজেদের ঘনিষ্ঠতম স্বজনেরও চরম ক্ষতি সাধন করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধাগ্রস্ত হয় না।

২. এরা অত্যন্ত আবেগজনিত ও হটকারী হয়। প্রবৃত্তির তাড়নায় তাৎক্ষণিকভাবে এরা যেকোনো অসামাজিক, অমানবিক ও নীতিবর্জিত কার্যকলাপে লিপ্ত হতে পারে।

৩. মিথ্যা ভাষণ এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়। সম্পূর্ণ অকারণেই এরা সত্যের অপলাপ ঘটায়। অকারণে এরা সত্যকে বিকৃত করে, আনন্দ পায়। ফলে অপর ব্যক্তিরা অচিরেই এদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। 

৪. এদের মধ্যে চরম নেতিবাদমূলক মনোভাব দেখা যায়। অন্যের আদেশ-উপদেশ এদের মধ্যে বিপরীত ধর্মী আচরণ করার তাগিদ সৃষ্ট করে। 

৫. এরা সর্বদা সুখবাদের অনুসারী হয়। পরিণাম বিবেচনা না-করে এরা বর্তমান সুখভোগকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।

৬. এদের মধ্যে দায়িত্ববোধের চরম অভাব পরিলক্ষিত হয়। এরূপ দায়িত্বহীনতার ফলে তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত জীবনে মাঝে মাঝে চরম সংকটের সৃষ্টি হয়।

৭. এদের ব্যক্তিত্ব অত্যন্ত আপাত মধুর হয়। এদের বাহ্যিক আচরণ অত্যন্ত মার্জিত, ভদ্রোচিত ও শিষ্টাচারমূলক হয়। ফলে প্রাথমিক পরিচয়ে অতি সহজেই অন্য ব্যক্তিরা এদের প্রতি মুগ্ধ ও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। 

৮. স্বভাবগতভাবে এরা কর্মবিমুখ ও অলস হয়। আমোদ-প্রমোদ বৃথা কালক্ষেপ করা এদের নেশায় পরিণত হয়। শিক্ষালাভ ও পেশা গ্রহণের প্রতি-এদের তিলমাত্র আগ্রহ থাকে না।

৯. এদের মধ্যে বিবেকবোধ থাকে না এবং অভিজ্ঞতা থেকে এরা কোনোরূপ শিক্ষালাভও করে না। বিবেকবোধের অভাবের জন্য এরা যেকোনো রূপ ক্ষতিকারক কার্যে লিপ্ত হতে পারে।

১০. এরা স্বভাবগতভাবে অপরাধপ্রবণ হয়। অভ্যাসবশত এরা বিভিন্ন অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যে লিপ্ত হতে পারে। কিন্তু এরা পেশাদার অপরাধী নয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url