মনোবিজ্ঞানের জরিপ পদ্ধতি
মনোবিজ্ঞানের জরিপ পদ্ধতি (Survey Method of psychology)
জরিপ পদ্ধতি প্রধানত সমাজ মনোবিজ্ঞানীরা প্রয়োগ করে থাকেন। মানুষের সামাজিক আচরণ অনুধ্যানে জীবন ইতিহাস জানবার জন্য যখন অধিক সময় ব্যয় করা সমীচীন নয় তখন জরিপ পদ্ধতি প্রযোগ করে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই তথ্য সাধারণত লিখিত প্রশ্ন অথবা মৌখিক প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। লিখিত প্রশ্নপত্রে আচরণের প্রাসঙ্গিক বিষয়ের ওপর কতকগুলি প্রশ্ন তৈরি করে ব্যক্তিকে দেয়া হয়। ব্যক্তি লিখে অথবা মৌখিকভাবে তার উত্তর দিতে পারে। মৌখিক প্রশ্নের বেলায় কোন প্রশ্ন পত্র তৈরি করা হয় না। তবে ব্যক্তির সাথে আলাপ-আলোচনায় মৌখিকভাবে প্রশ্নের উত্তর জেনে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অন্তর্দর্শনেরই অনুরূপ। কারণ কোন অতীত ঘটনা সম্পর্কে জানতে হলে ব্যক্তি সে বিষয়ের ওপর একটু চিন্তা করবে, তারপর বর্তমান সচেতন অবস্থায় যতটুকু তার স্মরণ থাকবে ততটুকুই সে উত্তর দেবে। যখন কোন বিশেষ এলাকার লোকসংখ্যার ওপর তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয় অনুসন্ধানকারী তখন ঐ এলাকার কতকগুলি লোককে নমুনায়নের (Sampling) মাধ্যমে একটি আদর্শ দল হিসেবে বেছে নেবেন। এই দলকে সমগ্র জনসংখ্যার প্রতিনিধি হিসেবে ধরা হয়। তারপর এই দলের প্রত্যেকের নিকট থেকে লিখিত প্রশ্নপত্র অথবা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যই ঐ এলাকার জনসংখ্যার তথ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জরিপ পদ্ধতির সুবিধা হল প্রথমত, এতে এলাকার জনসংখ্যার প্রত্যেকের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন হয় না। আদর্শ দল হিসেবে যাদেরকে বাছাই করা হয় শুধুমাত্র তাদের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেই চলে। দ্বিতীয়ত, প্রতিনিধিত্বমূলক জনসংখ্যার নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহের ফলে সময় ও শ্রম কম ব্যয় হয়। তৃতীয়ত, সময় কম লাগার দরুন খরচও কম হয়।
এই পদ্ধতির প্রধান ত্রুটি হল যে দলের নিকট থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেই দল যদি সমগ্র জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্বমূলক না হয় তাহলে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা নির্ভুল হবে না। অনেকে এই পদ্ধতিকে সুসংবদ্ধ পর্যবেক্ষণ বলে আখ্যায়িত করেন, আবার অনেকে একে জরিপ পদ্ধতিও বলেন। নাম যাই হোক না কেন পরীক্ষণ পদ্ধতির সাথে এর একটি মিল আছে, আর তা হল এই পদ্ধতিতে একটি চলের পরিমাপ করা হয়। তবে পরীক্ষণ পদ্ধতির সাথে এর পার্থক্য হল পরীক্ষণকারী কোন বিশেষ চলকে ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারেন না। তিনি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশ বা প্রকৃতির সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিদ্যমান তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।
জরিপ পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। এর প্রধান প্রধান প্রয়োগ ক্ষেত্র হল জনমত যাচাই, জনমতের ওপর কি কি উপাদান প্রভাব বিস্তার করে, বিজ্ঞাপন খরিদ্দারের ওপর কি প্রভাব বিস্তার করে, শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্যের পশ্চাতে কি কি উপাদানের প্রভাব আছে, এমনকি বুদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও বংশগতি কি ভূমিকা পালন করে ইত্যাদি। জরিপ পদ্ধতির সাহায্যে এ ধরনের আরও অনেক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা হয়। বর্তমানে জরিপ পদ্ধতির সাহায্যে মনোবিজ্ঞানের নানাবিধ সমস্যা যেমন ব্যক্তিত্বের উপাদান কি, সামাজিক রাজনীতি, শিল্পীয় সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়তা করছে।