মনোবিজ্ঞানের পরিসংখ্যান পদ্ধতি
মনোবিজ্ঞানের পরিসংখ্যান পদ্ধতি (Statiteal Method of Psychology)
বিজ্ঞানের প্রত্যেক শাখার উপকরণ (meterial) সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য তার নিজস্ব কিছু কিছু হাতিয়ার (tool) থাকে। মনোবিজ্ঞানে এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পরিসংখ্যান ছাড়া মনোবিজ্ঞানে আর এমন কোন পদ্ধতি নেই যার সাহায্যে এর তথ্যসমূহকে সংখ্যার মাধ্যমে অর্থবহ করে প্রকাশ করা যায়। পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত উপাত্ত বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থবহ করে তুলবার জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ব্যক্তি ক-এর ওপর ২০০ পদবিশিষ্ট একটি বুদ্ধি অভীক্ষা প্রয়োগ করা হল এবং তার প্রাপ্ত সাফল্যাংককে পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে বুদ্ধাঙ্ক পাওয়া গেল ১০০। এটা ব্যক্তি ক-এর স্বাভাবিক বুদ্ধির পরিচয় বহন করে। এই একটি মাত্র সংখ্যার সাহায্যে ব্যক্তি ক-এর বুদ্ধি কতটুকু তা পরিষ্কারভাবে বোঝা গেল।
বর্তমানে মনোবিজ্ঞান ক্রমবিকাশের যে স্তরে এসে পৌঁছেছে তাতে পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্য ছাড়া এর মৌলিক উপাদানগুলি বুঝবার কোন উপায় নেই। কারণ পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে উপাত্তের গাণিতিক বিশ্লেষণের সাহায্যে উপাত্তগুলিকে একটি মাত্র সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করে সহজবোধ্য করে তোলা হয়। পদ্ধতি হিসেবে পরিসংখ্যান মনোবিজ্ঞানে তিনটি উদ্দেশ্য সাধন করে।
প্রথমত, কোন বিশেষ সমস্যার ওপর বিক্ষিপ্ত তথ্যকে সংক্ষিপ্ত ও অর্থবহ করে তুলবার পন্থা হিসেবে এটি কাজ করে। আচরণের ওপর সংগৃহীত বিপুল পরিমাণ উপাত্তকে বর্ণনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত এবং অর্থপূর্ণ করে তোলে। যেমন কারও বুদ্ধির পরিমাণ শুধুমাত্র বুদ্ধাঙ্কের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া বুদ্ধাঙ্ক বেশ সংক্ষিপ্ত এবং অর্থবোধক। তা দু'জন ব্যক্তির বুদ্ধাঙ্কর তারতম্যকে সংখ্যার সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। যেমন ব্যক্তি 'ক' ও খ-এর বুদ্ধাঙ্ক যথাক্রমে ১০০ ও ১২০ হলে ব্যক্তি-খ ব্যক্তি ক-এর চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান। এখানে ব্যক্তি ক-এর বুদ্ধি তার বয়সের তুলনায় স্বাভাবিক কিন্তু ব্যক্তি খ-এর চেয়ে সে কম বুদ্ধিমান। বুদ্ধির তারতম্যের এই ধারণা সাধারণ পরিমাপমূলক পদ্ধতির সাহায্যে প্রকাশ করা হয়েছে। এটিই হল পরিসংখ্যানের বর্ণনামূলক কাজ।
দ্বিতীয়ত, পরিসংখ্যান পদ্ধতি দুটি আচরণজনিত ঘটনার অনুসন্ধানমূলক তথ্য (Correlational information) প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। কোন ব্যক্তির বুদ্ধির সাথে তার শিক্ষামূলক কাজকর্মের সম্পর্ক কিরূপ তা সহ-পরিবর্তনের মান (co-efficient of correlation)-এর সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। সহ-পরিবর্তনের মান একটি সংখ্যামাত্র। অভীক্ষার সাহায্যে বুদ্ধি ও শিক্ষামূলক কাজের যে দুটি সাফল্যাংক পাওয়া যায় তাদের সম্পর্ককে যে সংখ্যাটির সাহায্যে প্রকাশ করা হয় সেই সংখ্যাটি হল সহ-পরিবর্তনের মান।
তৃতীয়ত, পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ব্যক্তির কোন বিশেষ আচরণের উপাত্তকে পরিসংখ্যান পদ্ধতির সাহায্যে বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল পাওয়া যায় তার ওপর ভিত্তি করে মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে বিশেষ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। দুটি দলের ওপর পরীক্ষণ চালিয়ে অথবা অভীক্ষা প্রয়োগ করে যে উপাত্ত পাওয়া যায় তার সহ-পরিবর্তন নির্ণয় করে মনোবিজ্ঞানী তাদের সম্পর্কে অনেক মূল্যবান সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন। তবে শর্ত থাকবে যে ঐ দুটি দলের মধ্যে যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হবে তা যেন কোন দৈব ঘটনার ওপর নির্ভরশীল না হয়। সুতরাং এই পদ্ধতি মনোবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণীর তাৎপর্য নির্ণয় করে।