মনোবিজ্ঞানের সাক্ষাৎকার পদ্ধতি

 মনোবিজ্ঞানের সাক্ষাৎকার পদ্ধতি (Interview Method of Psychology)

পরীক্ষণ পাত্রকে সামনাসামনি বসিয়ে আলাপ-আলোচনা বা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তার সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য অবগত হবার নামই সাক্ষাৎকার পদ্ধতি। পরীক্ষক ব্যক্তি আচরণে যেসব প্রাসঙ্গিক বিষয় জানতে চান সে সম্বন্ধে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং ব্যক্তি তার উত্তর দেয় শুধু প্রশ্ন নয়, অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরীক্ষক ব্যক্তির বুদ্ধি ও ব্যক্তিত্বের প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত হন। এছাড়াও তিনি ব্যক্তির আলোচনার ধারা, উপস্থাপন ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস এবং কোন বিষয় সম্পর্কে ব্যক্তির জ্ঞান প্রভৃতি লক্ষ্য করেন।

বর্তমানে প্রায় ক্ষেত্রেই সাক্ষাৎকার পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। কর্মী নির্বাচন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য কারিগরি অথবা পেশামূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সৈন্য বিভাগে লোক নির্বাচনে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রায়ই ক্ষেত্রে দেখা যায় সাক্ষাৎকার পদ্ধতি অন্যান্য পদ্ধতি যেমন অন্তদর্শন, জীবন ইতিহাস, রোগী পরীক্ষা ইত্যাদির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কিন্তু এটি স্বতন্ত্রভাবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষ করে বুদ্ধি ও ব্যক্তিত্ব নিরূপণের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির সাহায্যে বর্ণনামূলক পরিমাপ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় অন্যান্য পদ্ধতির সাহায্য না নিয়েও শুধুমাত্র সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তির আচরণ সম্পর্কে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য অনুধাবনে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীগণ সাধারণত সাক্ষাৎকার পদ্ধতির ওপর নির্ভর করেন। তবে এই পদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করে সাক্ষাৎকারের সময় পরীক্ষক ও পরীক্ষণ পাত্রের মধ্যে মধুর সম্পর্কের ওপর।

এই পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত নয়। প্রথমত, এই পদ্ধতির সাহায্যে আচরণ সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তার সাফল্য সম্পূর্ণরূপে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর দক্ষতার ওপর নির্ভর করে। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী অসতর্ক কিংবা অনভিজ্ঞ হলে এই পদ্ধতির মূল্য ব্যাহত হয়। দ্বিতীয়ত, এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল কোন পরিমাণ বা কোন সংখ্যার মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। শুধু বর্ণনার সাহায্যে কতকগুলি বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করা হয় মাত্র। সুতরাং প্রাপ্ত ফলাফল যথার্থ কি-না তা পুনঃপ্রমাণ করার কোন উপায় থাকে না। এসব অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও অন্যান্য বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতির ন্যায় সাক্ষাৎকার পদ্ধতির সাহায্যে অনেক মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং তা মনোবিজ্ঞানের ক্রমবিকাশে বিশেষ সহায়তা করে থাকে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url