মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসামূলক পদ্ধতি

মনোবিজ্ঞানের চিকিৎসামূলক পদ্ধতি (Clinical Method)

ইংরেজি Clinical শব্দটি গ্রিক শব্দ Klinikos থেকে এসেছে। Klinikos-এর অর্থ শয্যা। রোগী শয্যাশায়ী থাকে বলে এর অর্থ ক্রমশ রোগ সম্বন্ধীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনোবিজ্ঞানে এটি আবার বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়।

প্রতিমুহূর্তে মানুষ তার পরিবেশের সাথে সঙ্গতিবিধান (adjustment) করে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু সব সময় সে পরিবেশের সাথে সুষ্ঠু সঙ্গতিবিধান করে চলতে পারে না। আর পরিবেশের সাথে সুষ্ঠু সঙ্গতিবিধান না হলে তার মধ্যে এক ধরনের মানসিক বিকার দেখা দেয়। মনোবিজ্ঞানীরা চিকিৎসামূলক পদ্ধতির সাহায্যে এসব মানসিক রোগের কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় করে তা দূরীকরণের চেষ্টা করেন।

যেসব মনোবিজ্ঞানী মানসিক রোগের বিশ্লেষণপূর্বক তার কারণ, প্রকৃতি নির্ণয় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন কেবল তাঁরাই এই চিকিৎসামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করেন। পারিপার্শ্বিক পরিবেশের সাথে যারা সুষ্ঠু সঙ্গতিবিধান করতে অক্ষম তাদের অনেকে আবার জটিল মানসিক রোগ অথবা ব্যক্তিত্বের গোলযোগে ভোগে। চিকিৎসার জন্য এরা মনোবিজ্ঞানীর কাছে আসে। মনোবিজ্ঞানী ব্যক্তির মনোবিকার সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য তার অতীত এবং বর্তমান জীবনের সকল ঘটনার বিবরণ সংগ্রহ করেন। এই তথ্য ব্যক্তির নিজের কাছ থেকে এবং তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

মনোবিজ্ঞানী ডাক্তার নন। সুতরাং ব্যক্তির কোন শারীরিক রোগ আছে এরূপ সন্দেহ জাগলে তিনি ব্যক্তিকে প্রথমে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠান। ডাক্তারি পরীক্ষায় রোগের কোন শারীরিক কারণ ধরা না পড়লে তিনি রোগীকে নিজের পদ্ধতি অনুসারে চিকিৎসা শুরু করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি রোগীকে কতকগুলি অভীক্ষার সাহায্যে পরীক্ষা করে নেন। এই অভীক্ষা সাধারণত ব্যক্তির বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব কোন বিষয়ের প্রতি তার অনুরাগ, তার দক্ষতা ও পরিপক্বতা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর হয়ে থাকে। বিশেষ করে ব্যক্তিত্বের অভীক্ষার সাহায্যে তিনি ব্যক্তির আচরণ বৈকল্য নির্ণয় করে থাকেন। তারপর তা দূরীকরণের জন্য তিনি ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেন।

আচরণ অনুধ্যানের জন্য এই পদ্ধতি সাধারণত ব্যক্তিগত, আকস্মিক এবং অনিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। তথ্য সংগ্রহের এই উপায়গুলি কোন যথার্থ পরিমাপের নিশ্চয়তা দিতে পারে না। ফলে এই পদ্ধতিতে গৃহীত তথ্যগুলি বিজ্ঞানসম্মত নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে আচরণ বৈকল্যের গুরুত্বপূর্ণ কারণ নির্ণয় বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। মনোচিকিৎসকগণ কোন ব্যক্তির বিশেষ ধরনের আচরণের জন্য কোন বিশেষ একটি ঘটনাকে অধিক মূল্য দিয়ে থাকেন। আর ঐ বিশেষ ঘটনাটি হয়তো তার জন্য একটি ব্যতিক্রমধর্মী কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সন্ধান দেওয়া যা অন্য কোন বস্তুনিষ্ঠ পদ্ধতির সাহায্যে অনুসন্ধান করে দেখা যায়। পাশ্চাত্যের অনেক দেশে রোগী পদ্ধতির প্রয়োগ খুব বেশি। কারণ সেখানকার লোকদের আচরণ বৈকল্যের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি বিশেষ সুফল দেখাতে সক্ষম হয়েছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url